আপোষহীন বারুদ

schedule
2024-06-23 | 14:06h
update
2024-06-23 | 14:06h
person
kolkatarsomoy.com
domain
kolkatarsomoy.com

নবারুণ ভট্টাচার্য সাহিত্যের সঙ্গে কোনোদিন আপোস করেননি । তিনি জীবন দেখেছেন তাই লিখেছেন। তাঁর লেখায় সাধারন মানুষের দৈনন্দিন জীবনের ভাষা ও স্ল্যাং জায়গা পেয়েছে। তাই তাঁর লেখায় অনন্য মাত্রা পেয়েছে আমাদের কাছে।
সাহিত্যকে সমাজের সভ্যতার আয়না বলা হয়। কিন্তু তাঁর লেখায় সেই আয়ণা ভেঙে দিয়ে, তাঁর সাহিত্য তুলে ধরেছে রাষ্ট্রশক্তির সামনে সমাজের অপর দিকের ছবি। আসলে সভ্যতা জীর্ণ হলে লেখককে তাঁর পথ নির্দিষ্ট করতে হয়। রাষ্ট্র যখন সাহিত্য প্রভাবিত করে নিজের রঙে রাঙিয়ে ফেলছে।সেই সময়ে নবারুণ ভট্টাচার্য নিজস্ব পথ নিপুণভাবে এগিয়ে গেছেন স্রোতের বিপরীতে। কাঁটা বেছানো পথে নির্ভীক ভাবে, বুকের ভিতর জমে থাকা বারুদের আগুন ছড়িয়ে দিয়েছে সবার মাঝখানে, । নিন্দুকরা বলেছেন, তিনি সাহিত্যকে ঘেঁটে দিয়েছেন, তিনি বলেছেন প্রতিষ্ঠানবিরোধী।
তবে তিনি আদ্যপান্ত রাজনৈতিক মানুষ। প্রবলভাবে প্রগতিশীল ও সমালোচক। তাঁর সৃষ্টির অন্যতম দিক মানুষের কথাই ছিল । ১৯৪৮ সালের ২৩ জুন বহরমপুরে জন্মগ্রহণ করেন মহাশ্বেতা দেবী ও বিজন ভট্টাচার্যের সন্তান নবারুণ ভট্টাচার্য। তাঁর বাবা বিজন ভট্টাচার্যের নাটকে ছিল ফ্যাসিবাদ বিরোধিতা ও কৃষক, শ্রমিক তথা মেহনতী মানুষের সংগ্রাম এবং মা মহাশ্বেতা দেবী ছিলেন আদিবাসী মানুষদের কণ্ঠস্বর। নবারুণ ভট্টাচার্যের ব্যক্তিত্বে, সাহিত্যে, জীবন ধারায় এর প্রভাব পড়েছিল। তাঁর রচনাশৈলী যেন এক বিশেষ ধারার জন্ম দিয়েছিল,সামাজিক ঘাত-প্রতিঘাত, তির্যক সমালোচনা, রাজনৈতিক সমীকরণ, মানুষের মুখের ভাষা তথা রাস্তাঘাটের তথাকথিত জীবন তাঁর লেখায় উঠে এসেছে। উঠে আসে তাঁর লেখায় সমসাময়িক ঘটনার বিদ্রোহ, আকণ্ঠ সত্যতা। তাঁর লেখা ‘হারবার্ট’, ‘কাঙাল মালসাট’, ‘খেলনা নগর’, ‘লুব্ধক’ প্রভৃতি উপন্যাসে পুঁজিবাদী কাঠামোর বিরোধীর চিত্র পরিস্কার ফুটে ওঠে। অন্যান্য উপন্যাস ‘যুদ্ধ পরিস্থিতি’, ‘অটো ও ভোগী’, ‘ফ্যাতাড়ু ও চোক্তার’, ‘মবলগে নভেল’ প্রভৃতি সাহিত্যের জগতে জন্ম দিয়েছিল বিরুদ্ধ স্বরের, জন্ম দিয়েছিল খ্যাতির প্রতি ঘৃণা ও সৃষ্টির প্রতি সৎ থাকার স্পর্ধা। ১৯৭০ সালে বারাসাতে ৮ জন বামপন্থী খুন হওয়ার পর তিনি লিখলেন ‘এই মৃত্যু উপত্যকা আমার দেশ না’ কবিতাটি, ভীষন জনপ্রিয় । তাঁর প্রথম কবিতার বই প্রকাশিত হল ১৯৮৩ সালে ‘এই মৃত্যু উপত্যকা আমার দেশ না’ নামে। আজও শাসকের রোষের সামনে এই কবিতাই হয়ে ওঠে প্রতিরোধী প্রতিবাদী কন্ঠস্বর । তাঁর রচনা জীর্ণ সভ্যতার ভিতর বারুদের দলিল । তাঁর লেখা জন্ম দিয়েছিলো বাস্তবধর্মী, প্রতিবাদী, দৃঢ় চেতনাধর্মী, সামাজিক ছোটগল্পের। তাঁর উল্লেখযোগ্য রচনা হল ‘হালাল ঝান্ডা’, ‘ফ্যাতাড়ুর কুম্ভীপাক’, ‘ফ্যাতাড়ুর বোম্বাচাক’, ‘ফ্যাতাড়ু বিংশতি’ প্রভৃতি । ১৯৯১ সালের থেকে তিনি কবি বিষ্ণু দে –র পত্রিকা ‘সাহিত্যপত্র’ সম্পাদনা করেন। তিনি দীর্ঘদিন ‘নবান্ন নাট্যগোষ্ঠী’ পরিচালনা করেছিলেন। ২০০৩ সালের পর ‘ভাষাবন্ধন’ নামে একটি পত্রিকা সম্পাদনা করেছিলেন। ১৯৯৬ সালে তাঁর ‘হারবার্ট’ উপন্যাসের জন্য তৎকালীন পশ্চিমবঙ্গের বামফ্রন্ট সরকারের দেওয়া কথাসাহিত্যের সর্বোচ্চ পুরস্কার ‘বঙ্কিম পুরস্কার’ পান। ১৯৯৭ সালে ‘হারবার্ট’ উপন্যাসের জন্য নবারুণ ভট্টাচার্য ভারত সরকারের থেকে ‘সাহিত্য আকাদেমি’ পুরস্কার গ্রহণ করেন। আসলে নবারুণ ভট্টাচার্যের দাদু ছিলেন বিখ্যাত নাট্য ব্যক্তিত্ব মণীশ ঘটক, আত্মীয় ছিলেন ঋত্বিক ঘটক। তাঁর ভিতর জন্ম হয়েছিল সমাজকে শিল্পীর নজরে দেখার গভীর বোধ।সাম্রাজ্যবাদের ঘোরতর বিরোধী মহান সাহিত্যিকের মৃত্যু হয় ২০১৪ সালের ৩১ জুলাই আন্ত্রিক ক্যান্সারের কারণে মৃত্যু হয় । আজকের সমাজে আজও তাঁর রচনা প্রবাহে তাঁর প্রতিবাদী কণ্ঠস্বরের মৃত্যু হয়নি।

Advertisement

Imprint
Responsible for the content:
kolkatarsomoy.com
Privacy & Terms of Use:
kolkatarsomoy.com
Mobile website via:
WordPress AMP Plugin
Last AMPHTML update:
22.12.2024 - 21:21:09
Privacy-Data & cookie usage: