গোটা বিশ্ব কলকাতাকে শহরকে চেনে। কিন্তু আমাদের বাংলার বুকে আরও যে কলকাতা আছে তা খোঁজ খবর রাখেন ক’জন?কালীকোট্টা বা কালী কোঠা অর্থাৎ কালীর কোঠা বা ঘর বা কালী মন্দির থেকে এই শব্দ এসেছে। বলে দাবি করলেও। কিছু মানুষ বলেছেন কালীঘাটের পাশে কলিকাতা নামে একটি গ্রাম অনেক আগে থেকেই বিরাজ করছিল।
কেউ কেউ বলেন, কালীক্ষেত্র থেকে এসেছে কলিকাতা, কেউবা বলেন কিলকিল থেকে এসেছে কলিকাতা। যদিও কল্পনাপ্রসূত তত্ত্বএগুলি সব গুলো। আধুনিক ইতিহাস গবেষক ও ভষাতত্ত্ববিদেরা তবে একটি সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন, তা কিছু টা গ্রহণযোগ্য ও যুক্তিপূর্ণ।
তাদের মতে কলিকাতা একটি খাঁটি শব্দ। কলি শব্দ টি এসেছে কলিচূনের জন্য। শামুকপাড়া থেকে কাতা শব্দটি এসছে। যেমন সুতানুটী নামটি এসেছে সুতার নুটী বা গোলার হাট বা আড়ত থেকে তেমনই। চুনের কারখানা থেকেই এসেছে কলিকাতা নাম।
বাংলা দেশের গ্রামের নাম নিয়ে, গবেষণা করেছিলেন,ভাষাতত্ত্ববিদ সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায়ের এক ছাত্র। তাঁর প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, অবিভক্ত বাংলায় মোট তিনটি কলিকাতা গ্রামের নাম পাওয়া যায়। একটি বর্তমানে এই মহানগরে পরিণত হয়েছে। অন্যদুটির মধ্যে একটি রয়েছে ঢাকা জেলার লৌহজঙ্গ থানা এলাকায় আর একটি রয়েছে হাওড়ার আমতা থানা এলাকায়।
এই গ্রামগুলিতে একটা সময় শামুক পুড়িয়ে কলিচুন তৈরি করা হত বলেই এদের নাম কলকাতা। তবে হাওড়ার ছোট কলিকাতাও যে কলিচুন প্রস্তুতের গড় ছিল, তার প্রমাণ আজও রয়েছে গেছে।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, একটা সময় এই রসপুরের এই কলিকাতা গ্রাম বেশ সমৃদ্ধশালী ছিল। দামোদরের তীরে এই অঞ্চলে অন্যতম প্রধান কলিচুন তৈরি হতো ও এটি বাণিজ্যকেন্দ্র ছিল। এখানে চুনা তৈরী কর্মীদের বাসও ছিল অনেক। স্থানীয়রা বলেন, এইখানে কলিচুন তৈরি হত, একদম ভিন্ন পদ্ধতিতে। শামুক ধুয়ে নিয়ে পণের মধ্যে সাজিয়ে দেওয়া হয়। শামুক পোড়াবার জন্য বড় বড় মাটির পণ তৈরি করা হয়। তলায় হাঁড়ি উপুড় করে সাজানো। তার উপর ঘুঁটে পাতা দিয়ে সাজানো হতো, তার উপর শামুকগুলি সাজিয়ে আগুন দেওয়া হতো। পোড়ানোর পর শামুক পরিষ্কার করে, তলামাথা বাদ দিয়ে, কেবল মাঝখানটা নিয়ে একটা জলের ডাবায় সামান্য চিটেগুড় দিয়ে ভিজিয়ে দেওয়া হতো। তারপর ফুটিয়ে গুঁড়ো করে নেওয়া হতো। ছোট কলিকাতা বর্তমানে কোনও জনপ্রিয় জায়গা না হলেও, একটা সময় যে সমৃদ্ধ গ্রাম ও বাণিজ্যকেন্দ্র ছিল, তা আন্দাজ করা যায়। এই অঞ্চলে বেশ কিছু প্রাচীন মন্দির অবশিষ্ট রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম ধর্মরাজের মন্দির, কালীমন্দির। কলকাতায় ধর্ম তালায় ধর্মরাজ মন্দির ছিলো বলে অনেকেই দাবি করেন।