google-site-verification=r3lYzE3jI5XC8igrXRKdm9HAWALrzmx6coPmyeHNww4
Spread the love

আমাদের ভারতবর্ষে মাত্র তিনটি ফোল্ডিং ব্রিজ আছে। অহংকারের বিষয় হলো একটি ব্রিজ কলকাতা শহর। খিদিরপুর ব্যাসকিউল ব্রিজটা হলো ফোল্ডিং ব্রীজ । কলকাতা বন্দরে বড়ো মাপের জাহাজ এলে, জাহাজ চলাচলের জন্য এই ব্রিজ দুভাগ হয়ে উঠে আসে পাড়ের দিকে। জাহাজ চলে গেলে আবার জায়গায় ফিরে যায় আগের মতো। কলকাতার খিদিরপুর ছাড়া মুম্বাই পোর্ট ও তামিলনাড়ুতে এমন দু’টি ব্রিজ রয়েছে।
পৃথিবীর প্রথম ব্যাসকিউল ব্রীজ হলো টাওয়ার ব্রীজ।
১৮৮৬ থেকে ’৯৪ এর মাঝামাঝি লন্ডনের টাওয়ার ব্রিজ পৃথিবীর প্রথম ব্যাসকিউল ও সাসপেনশন ব্রিজের সংমিশ্রন হিসাবে বিখ্যাত। টাওয়ার সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হতে ১৮৮৬ থেকে ১৮৯৪ এই আট বছর সময় লেগেছিল। মোট পাঁচটি নির্মাণ প্রতিষ্ঠান এই প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত ছিল। ৪৩২ নির্মাণ শ্রমিক এই সেতু নির্মাণে কঠোর পরিশ্রম করেন। সেতুর কাঠামো তৈরি করতে ১১ টন ওজনের স্টিল ব্যবহার করা হয়। সেতুর স্টিলের কাঠামোতে পরবর্তী সময়ে কোর্নিশ গ্রানাইট ও পোর্টল্যান্ড পাথরের আবরণ দেওয়া হয়।

টাওয়ার সেতু নির্মাণের আগে ১ হাজার ২৩৫ ফুট দীর্ঘ সাবওয়ে দিয়ে টেমস নদী পার হতো মানুষ। এই সাবওয়ের নাম ছিল টাওয়ার সাবওয়ে। ১৮৭০ সালে উদ্বোধনের পর এই সাবওয়েই ছিল নদী পারাপারের সবচেয়ে উপযুক্ত মাধ্যম। আন্ডারগ্রাউন্ড রেললাইন যুগের শুরুর দিকের সাবওয়ে ছিল এই টাওয়ার সাবওয়ে। অবশ্য উদ্বোধনের তিন মাস পরেই এটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। টাওয়ার সাবওয়ে পরবর্তী সময়ে আবার খোলা হলে টোল ফি নেওয়া শুরু হয়, যা আগে ছিল না। এ কারণে বেশির ভাগ মানুষ টেমস নদী পারাপারের জন্য টাওয়ার সেতুর ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েন কারণ সেখানে তাদের কোনো টোল দেওয়া লাগত না। আয় না হওয়ায় ১৮৯৮ সালের দিকে টাওয়ার সাবওয়ে একেবারে বন্ধ করে দেওয়া হয়।

থাক সে সব গল্প কথা।১৫, নভেম্বর ১৯৬৬ তারিখ উদ্বোধন হয় কলকাতা ব্যাসকিউল ব্রিজের। যানবাহন চলাচল শুরু হয় এই সেতু দিয়ে। ওয়াগেন বিরো ব্রিজ সিস্টেম নামক অস্ট্রিয়ান এক কোম্পানির তৈরি করে এই ব্রিজ।
খিদিরপুরের এই ব্রিজ দিয়ে যেতে গিয়ে হঠাৎ আপনাকে আটকানো হতে পারে ব্রিজের গোড়ায়। আপনি দেখতে পাবেন আপনার চোখের সামনে ব্রিজটি উঠে যাচ্ছে আকাশের দিকে। মাঝখান দিয়ে রাস্তা কাটছে এক বিরাট মাপের জাহাজ। টানটান পিচ রাস্তা আকাশের দিকে উঠে যেতে আমরা দেখতে পাবো কলকাতার এই অংশে।

খিদিরপুর ব্রিজ আসলে এক ইলেক্ট্রো-হাইড্রোলিক সিস্টেমে ওঠানামা করে । ব্রিজের মাঝ বরাবর একটি জায়গা থেকে দু-দিকে দু’টি অংশ আলাদাভাবে উঠতে থাকে উপর দিকে। একে বলা হয় ডাবল-লিফ ব্যাসকিউল ব্রিজ। ব্রিজের দু-প্রান্তের দু’টি মোটরের দ্বারা দু’টি গিয়ার নিয়ন্ত্রিত হয় ব্রীজটি। যখন গিয়ারগুলি সামনের দিকে চলে, ব্রিজ খুলে যায় আর তৈরি করে দেয় জাহাজ যাওয়ার রাস্তা। তারপর আবার বিপরীত দিকে গিয়ার চালিত হলে ব্রিজের দু’টি অংশ নেমে আসে যথাস্থানে তখন সাভাবিক হয় যান চলাচল। তবে এখানে কোনও পুলি বা তারের ব্যবস্থা নেই। ব্রিজের দু’টি প্রান্ত আলাদাভাবে মাটির সঙ্গে ৬৬ ডিগ্রি কোণে খুলে থাকে। তবে এই অবস্থায় পৌঁছতে অবশ্য সাত থেকে আট মিনিট সময় লাগে ব্রিজের। আবার পূর্বের জায়গায় ফেরাতেও লাগে প্রায় এই পরিমাণ সময়। এই পথে যাতায়াত করেন যারা তারা জানেন এই ব্রিজ দুপুর ২টো থেকে ৩টের মধ্যে খোলা হয় জাহাজ যাতায়াতের জন্য। কলকাতার বুকে হাতেগোনা কয়েকটি আশ্চর্যের মধ্যে এই ব্রিজটিও পরে। খিদিরপুরের এই ব্রিজকে কলকাতার একটি ঐতিহ্য।

Verified by MonsterInsights