google-site-verification=r3lYzE3jI5XC8igrXRKdm9HAWALrzmx6coPmyeHNww4
Spread the love

শ্রীকৃষ্ণচৈতন্যদেব বুঝেছিলেন যে— তেজস্বী ,আত্মবিশ্বাসী, অটুট ব্যক্তিত্বের অধিকারী উদ্যমী নিত্যানন্দই এমন একজন ব্যক্তিত্ব , যাঁকে সেসময়ের সমাজের ভীষণ প্রয়োজন। জাত-পাত বিভেদের বেড়াজালে আবদ্ধ সমাজের ক্ষুদ্র মানসিকতাকে , সংকীর্ণতাকে দূরীভূত করতে চাই নিত্যানন্দের মতো বৃহদ্ মানবিক-চেতনা সম্পন্ন একজন সংগঠকের। জনমানসচেতনার উদ্বোধন ঘটাতে একজন সুদক্ষ নেতার যা যা গুণ, সর্বংসহ উদার দৃষ্টিভঙ্গি ও অন্তরে মানবপ্রেম থাকা প্রয়োজন — তা সব নিত্যানন্দের মধ্যেই নিহিত আছে। শ্রীগৌরাঙ্গ দূরদৃষ্টি দিয়ে অনুধাবন করেছিলেন যে ,নিত্যানন্দের হৃদয়ে সকল জাতের মানুষের প্রতি যে সাম্যভাব আছে সেই ভাব, সেই নীতিকে যদি সমাজে প্রকাশিত করে দেওয়া যায় ,প্রবাহিত করে দেওয়া যায় তবে সমাজে এক বিরাট পরিবর্তন সূচিত হয়ে যাবে। আর তাই তিনি যখন সন্ন্যাস গ্রহণ করে পুরীতে বাস করছেন তখন এক বছর আদেশ করলেন নিত্যানন্দকে—-

“মূর্খ নীচজড়ান্ধাখ্যা যে চ পাতকিনোপরে।
তানেব সর্বথা সর্বান কুরু প্রেমাধিকারিণঃ।।”
(মুরারি গুপ্তের কড়চা-৪/২১/১০)

“প্রতি বর্ষে নীলাচলে তুমি না আসিবা।
গৌড়ে রহি মোর ইচ্ছা সফল করিবা।।
তাহা সিদ্ধি করে হেন অন্য না দেখিয়ে।
আমার দুষ্কর কর্ম তোমা হইতে হয়ে।”
(চৈতন্য চরিতামৃত, মধ্য, ১৬ পরিঃ)

“এতেকো আমার বাক্য যদি সত্য চাও।
তবে অবিলম্বে তুমি গৌড় দেশে যাও।।
মূর্খ নীচ পতিত দুঃখিত যত জন।
ভক্তি দিয়া কর গিয়া সবারে মোচন।।”
(চৈতন্য ভাগবত, অন্ত্য,৫)

—-“নিত্যানন্দ তুমি এভাবে আর রথযাত্রায় প্রতিবছর এসো না। এতে বঙ্গদেশের ধর্ম আন্দোলন ব্যাহত হবে। তুমিও যদি সন্ন্যাসী-মুনীদের মত করে সব ভুলে কেবল ধর্মাচরণ পালনে ব্যস্ত থাকো, তবে সমাজকে কে চালনা করবে ! সমাজের দুঃখী-দরিদ্র ,আর্ত-আতুরদের দুরাবস্থা কে ঘোচাবে! না, না,, তোমাকে যে আরও বৃহত্তর স্বার্থে কাজ করতে হবে ।আমি যে কাজ অসম্পূর্ণ রেখে এসেছি অন্য কারো দ্বারা তা হবার নয় । তোমাকেই হাল ধরতে হবে ।তুমি নামপ্রেম প্রদান করো জাতি বিভেদের উর্দ্ধে উঠে সকলকে দুর্দশাময় জীবন থেকে উদ্ধার করো তাদের।”

শ্রীচৈতন্যদেবের সেই আজ্ঞা শিরোধার্য করে নিত্যানন্দ বলেছিলেন, “আমি তো কেবল নর্তক, তুমিই আমার সূত্রধর । তুমি যা করাবে ,তাই করবো। তোমারই আজ্ঞা পালন করবো।আমার দেহের প্রাণ তো তুমিই । প্রাণ ছাড়া দেহের কী কোন মূল্য হয় ! তোমার কথাই শেষ কথা ।” নিজের গণসমেত অর্থাৎ অনুগত জনাদের নিয়ে ফিরে এসেছিলেন নিত্যানন্দ । অবশ্য এরপরও গৌরপ্রেমান্ধ নিতাই তাঁকে দেখতে ছুটে গেছেন নীলাচলে । প্রেমের টান কী কোন বারণ মানতে পারে কখনো ! প্রেমাস্পদকে পেতে , চোখের দেখা দেখতে তাঁর আজ্ঞা লঙ্ঘণ করাতেও তো সুখই নিহিত থাকে । তাই না ! …. ‌
……নম্রানতা সহ

ড. রাধাবিনোদিনী বিন্তি বণিক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights