কলমে: শুভ্রা দে ( লন্ডন থেকে)
কর্ম সুত্রে থাকি সাত সমুদ্র পাড়ের স্বপ্নের শহর সুদূর লন্ডনে । যেখান কাজ করি সেখানে এক ফ্যামিলির সাথে ঠিক হলো বেড়াতে যাবো। এমনি তে প্রকৃতির হিসেবে মার্চ মাসের দোলের সময়। ছুটি চলছিল বাচ্চাদের স্কুলের। কোথায় যাওয়া যায়, ঠিক হলো ঘুরতে যাওয়া হবে স্কট ল্যান্ড।যেমন ভাবা তেমন কাজ। পরের দিনই সবাই মিলে রওনা দিলাম স্কটল্যান্ডে উদ্দেশ্যে।
ওখানে গিয়ে উঠলাম একটা রিসোর্টে ।পাঁচ দিনের জন্য ভাড়া নিলাম জায়গাটা একটু গ্রাম মতো তবে ছবির মতো সুন্দর। ছোট ছোট সুরু রাস্তা। আপেল,নেসপাতি, অনেক রকমের গোলাপ ফুলের গাছ দিয়ে ঘেরা। বাড়িগুলো সব ছবির মতো সাজানো। বড়ো বড়ো সব মাঠ তাতে ভেড়া চড়ছে, অন্য দিকে ঘোড়া ঘাস খাচ্ছে। এমন সব মনোরম দৃশ্য ও পরিবেশে মন চনমনে হয়ে গেল। পরের দিন দোলের পূর্ণিমার রাত।
বসন্তের বিভিন্ন রকমের রং বাহারী লাল, কালো, হলুদ গোলাপ,ডাফডিল রিসোর্টের সাজানো বাগানে চাঁদের আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে গেছে।
আমি নিজের ঘরে অনেক রাত পর্যন্ত জেগে বই পড়ছি। পড়া শেষে করে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি রাত একটা বাজে। শীতে জমে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।
একটু জল খেয়ে শুতে যাবো ভাবছি। হঠাৎ জানলার দিকে চোখ গেলো কাঁচ দিয়ে উঁকি দিয়ে দেখে আমি চমকে উঠলাম। মুগ্ধ হয়ে গেলাম অনির্বচনীয় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপূর্ব দৃশ্য দেখে। কিছুক্ষণ অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম।পূর্ণিমা রাতে অবর্ণনীয় জোৎস্না আমাকে মুগ্ধ করে দিলো।
এর আগে আমি কোনো দিন শীতের রাতে জোৎস্নার আলোয় বাইরে বের হইনি। কিন্তু সেদিন আর নিজেকে আটকে রাখতে পারলাম না।
এই প্রথম পরিপূর্ণ জোৎস্না রাতের অপরূপ সুন্দর রূপ দেখলাম।
দরজা খুলে বাইরে এসে দাঁড়ালাম। কেউ কোথাও নেই, নিঃশব্দ, নিস্তব্ধ, জনহীন রাত। আকাশ ভরা জোৎস্না আর আমি একা। মনে পড়লো কবিগুরুর সেই অপূর্ব গানের লাইন ” যেতে যেতে পথে চাঁদ উঠে ছিল গগনে”
সে রাতে সঠিক বর্ণনা করা মতো ভাষা আমার জানা নেই। এমন ছায়াবিহীন জোৎস্নার আলো জীবনে এর আগে কখনো দেখিনি
হয়তো দেখার ইচ্ছা বা সময় আগে হয়নি।
আপেল, নেসপাতি গাছের ছায়া তেমন হয়নি কেননা গাছ গুলো খুব বড়ো হয়না। এসব দেখে মনটা কেমন যেন রোমাঞ্চিত হয়ে উঠলো।মনটা হু হু করে উঠলো।
এই রূপের সাথে প্রতক্ষ পরিচয় না হলে কোনদিন জানতেই পারতাম না স্রষ্টার অপূর্ব সৃষ্টির এই মনমাতানো দৃষ্টি নন্দন রূপের কথা। অপরিচিত ই রয়ে যেতো আমার কাছে।
সে রাতের মাধুরী ভুলতে পারিনি আজও, হয়তো জীবনের শেষদিন পর্যন্ত মনে থেকে যাবে। জোৎস্না রাণী তুমি কতো সুন্দর।