google-site-verification=r3lYzE3jI5XC8igrXRKdm9HAWALrzmx6coPmyeHNww4
Spread the love

অনুপম মাইতি

হাওড়া জেলার জয়পুর গ্রামে রায় পাড়ায় এক বিরল মন্দির আছে যা আমরা তথাকথিত যে সব মন্দির দেখতে পাই তা থেকে অনেকটাই আলাদা। মন্দিরটি দালান স্টাইলে দ্বিতল নির্মাণ হলেও এর স্টাইলটি ইউরোপিয়ান রীতিতে থামের উপর প্রতিষ্ঠিত ধবধবে দূধ সাদা মন্দির, টেরাকোটা ফলক বা প্লেট সম্বলিত। এটি লক্ষ্মী জনার্দন মন্দির নামে খ্যাত। এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন কাশীনাথ রায় ১৭৭৭ সালে। মন্দিরের পিছনে পেঁচা প্রবেশের রাস্তা আছে পশ্চিম দিকের দেয়ালে। দোতলায় কাঠের আলমারির মধ্যে পিতলের সিংহাসনে কষ্টিপাথরের দেবতা আছে।। মন্দিরপার্শ্বে স্মৃতিফলকে লেখা রয়েছে মন্দিরটি পূর্ণ সংস্কারের মূল সংগঠক শ্রী মানব রায় ও স্বর্গীয় বলাই রায় ও রায় পরিবারের সেবাইতবৃন্দ। মন্দিরের ফলকে কে কত পরিমাণ দান করেছেন, শুধু রায় পরিবার নয় সকল এলাকার বহু মানুষ এই সংস্কারে সাহায্য করেছেন, মন্দির সর্বসাধরণের। সাহায্যের পরিমাণ দেখে সংস্কারে দশ বারো লাখ টাকা বা তৎবেশি ব্যয় হয়েছে। সংস্কার কবে হয়েছে তার উল্লেখ নেই। উদ্বোধক ছিলেন নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনের মহারাজ শ্রীমৎ, স্বামী সুপর্ণানন্দ মহারাজ। স্মৃতিফলকে লেখা মন্দিরের প্রতিষ্ঠাকাল ১৭৭৫ সালে অর্থাৎ তখন হাওড়া জেলা ইংরেজ আধিপত্যের আগে এটি বর্ধমান জেলার আওতায় ছিল কেননা ১৭৯৫ সালে বর্ধমান জেলা থেকে আলাদা করে হাওড়া হুগলি সমেত হুগলি জেলা রূপে আত্মপ্রকাশ করে। যদিও হাওড়া জেলা ১৮৪৩ সালে গঠিত হলেও পরিপূর্ণ ভাবে ১৯৩৮ সালে চূড়ান্ত রূপ নেয়। তৎকালীন (১৭৯৫ এর আগে) বর্ধমান রাজ তিলকচাঁদের পুত্র তেজ চাঁদ রায় এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করতে প্রচুর সম্পত্তি দান করেন। তা বর্তমানে টিকে আছে ১৩ বিঘা জমি ও দুটি পুকুর নিয়ে। রায় পরিবারে সন্তানরা পালা করে পূজোর ব্যয় বহন করেন। ২৬ শে জানুয়ারীতে এক বিশাল করে অন্নকোট উৎসব পালিত হয়, তাছাড়া পালিত হয় দোল, রাস উৎসব। মন্দিরের অদূরেই রয়েছে এক স্বতন্ত্রই আলাদা বিরল রাসমঞ্চ। ছয় কোনা এক রত্ন বিশিষ্ট (অনেকটা প্রস্ফুটিত ফুল বা কুড়ির মত , যা স্পিরিচুয়ালিজম এর প্রতীক) ও ছয় অলিন্দ যুক্ত সিড়ি যুক্ত তিন ফুট উচ্চ বেসমেন্টের উপর অবস্থিত সাদা রাস মঞ্চ সত্যই সবার নজর কাড়ে। নগর বিচ্ছিন্ন এক প্রত্যন্ত গ্রামে এমন সুন্দর মন্দির আছে যা ভাবতেও অবাক লাগে যে মন্দির গ্রামের মানুষকে এক সাংস্কৃতিক বন্ধনে আবদ্ধ করেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights