google-site-verification=r3lYzE3jI5XC8igrXRKdm9HAWALrzmx6coPmyeHNww4
Spread the love

সাহিত্যসম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের সাহিত্যচর্চা শুরু হয় ১৮৫২ খ্রিষ্টাব্দে, “সংবাদ প্রভাকর” পত্রিকায় কবিতা প্রকাশের মাধ্যমে। বাংলা ভাষায় প্রথম সার্থক উপন্যাস দুর্গেশনন্দিনী (১৮৬৫) তাঁর লেখা। সাহিত্যিক বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের সাহিত্যকর্মের পূর্ণ তালিকা দিয়ে পোস্ট বড়ো করতে চাই না, তিনি লেখা গুলো প্রথম ভারতীয় দের জাতিবোধকে জাগিয়ে তুলেছিলেন। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (২৬ জুন ১৮৩৮ – ৮ এপ্রিল ১৮৯৪)ছিলেন উনিশ শতকের বিশিষ্ট বাঙালি ঔপন্যাসিক। বাংলা গদ্য ও উপন্যাসের বিকাশে তার অসীম অবদানের জন্যে তিনি বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে অমরত্ব লাভ করেছেন। তাকে সাধারণত প্রথম আধুনিক বাংলা ঔপন্যাসিক হিসেবে গণ্য করা হয়। তবে গীতার ব্যাখ্যাদাতা হিসাবে, সাহিত্য সমালোচক হিসাবেও তিনি বিশেষ খ্যাতিমান। তিনি জীবিকাসূত্রে ব্রিটিশ রাজের কর্মকর্তা ছিলেন। তিনি বাংলা ভাষার আদি সাহিত্যপত্র বঙ্গদর্শনের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ছিলেন। তিনি ছদ্মনাম হিসেবে কমলাকান্ত নামটি বেছে নিয়েছিলেন।তাকে বাংলা সাহিত্যের সাহিত্য সম্রাট বলা হয়।
তবে একটি কথা বলতেই হয়,বাংলায় সুলতানদের অরাজকতাময় শাসনের অবসান পর , নবজাগরনের নামে, কিছু ইংরেজি শিক্ষিত বাঙ্গালী পাশ্চাত্ত্যের সংস্কৃতির অন্ধ অনুকরণে ব্রতী হয়েছিলেন। এ সময় বঙ্কিমচন্দ্রের লেখা বুঝিয়ে ছিলো পাশ্চাত্ত্যের দর্শন-ইতিহাস থেকে শেখার পাশাপাশি ভারতীয় সংস্কৃতি-ঐতিহ্য-ধর্ম থেকেই ভারতীয়দের আত্মশক্তি অর্জন করে, ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে লড়াই করা উচিত। প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ অমলেশ ত্রিপাঠী তাঁর The Extremist Challenge বা ভারতের মুক্তিসংগ্রামে চরমপন্থী পর্ব গ্রন্থে দেখিয়েছেন ভারতীয় রাজনীতিতে চরমপন্থী মতবাদের ভাবগত পটভূমি তৈরীর পিছনে বঙ্কিমচন্দ্র, স্বামী বিবেকানন্দ ও দয়ানন্দ সরস্বতী তিনজন ব্যক্তিত্বের ভূমিকার কথাই বলেছেন । Charles Himesath তাঁর The Indian Nationalism and Hindu Social Reform গ্রন্থে বঙ্কিমচন্দ্রের সাহিত্য-কৃতির মধ্যেই চরমপন্থী রাজনৈতিক আদর্শের উৎস আবিষ্কারক হিসেবে দেখেছেন। বঙ্কিমচন্দ্র বিশ্বাস করতে শিখিয়েছিলেন, বিদেশ থেকে আমদানী করা কোন তত্ত্ব নয়, এ দেশের আবহাওয়া, মানুষের শারীরিক ও মানসিক বৈশিষ্ট্য এবং ঐতিহ্যই তার ভিত্তি হতে পারে।

বঙ্কিমচন্দ্রের বিভিন্ন লেখালেখি জাতীয়তাবাদ ও
চরমপন্থার আদর্শগত উৎস হিসেবে কাজ করেছে।।
তাঁর লেখা কৃষ্ণচরিত্র অনুযায়ী শ্রীকৃষ্ণ আর ন ঈশ্বর হয়ে থাকে নি। তিনি ধর্ম সংস্থাপনের জন্য দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালনের কাজে সদা তৎপর। বঙ্কিমচন্দ্র সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব আরোপ করেছেন শ্রীকৃষ্ণের গুণাবলীর মধ্যে তাঁর অতুলনীয় নেতৃ -প্রতিভার ওপর, তাঁর সামরিক জ্ঞান ও সাম্রাজ্য সংগঠনী কুশলতার ওপর। শ্রীকৃষ্ণ স্বপ্ন দেখেছিলেন এক ঐক্যবদ্ধ ভারতবর্ষের, আর এই স্বপ্নকে পূরণ করার জন্যই কুরুক্ষেত্রে অগণিত ক্ষুদ্র সামন্ত রাজাকে বিনাশ করে এক সুবিশাল, সংহত ধর্মরাজ্য সৃষ্টি করেছিলেন। এ প্রসঙ্গে মনে রাখতে হবে যে, বঙ্কিমচন্দ্রের এই ধর্মরাজ্যের সঙ্গে প্রতীচ্যের পররাজ্যলিপ্সু উগ্র জাতীয়তাবাদের কোন সাদৃশ্য ছিল না। তাই হয়তো গীতা হয়ে উঠেছিল বিপ্লবীদের সাথী।

বঙ্কিমচন্দ্রের কৃষ্ণচরিত্র প্রকাশিত হবার পর তিলক রচনা করলেন গীতার মারাঠি ভাষ্য, অরবিন্দ লিখলেন গীতার দীর্ঘ ভূমিকা, লাজপৎ রায় উর্দু ভাষায় শ্রীকৃষ্ণের জীবনী প্রণয়ন করলেন, ভক্তিযোগের ব্যাখ্যা লিখলেন অশ্বিনী কুমার দত্ত, ব্রাহ্ম বিপিনচন্দ্র পাল শ্রীকৃষ্ণকে ‘ভারত-আত্মা’ হিসাবে অভিহিত করেন, এমনকি ক্যাথলিক ব্রহ্মবান্ধব উপাধ্যায় লিখে ফেললেন – শ্রীকৃষ্ণতত্ত্ব। এতটাই ছিল বঙ্কিমের কৃষ্ণ চরিত্রের প্রভাব।
বঙ্কিমচন্দ্রের ধর্মতত্ত্ব (অনুশীলন) গ্রন্থের আদর্শে ও এর নাম অনুসারে বঙ্গের সবথেকে খ্যাতনামা বিপ্লবী সমিতি ‘অনুশীলন সমিতি’ প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯০২-এ। অনুশীলন সমিতির বিশিষ্ট বিপ্লবী জীবনতারা হালদার তাঁর অনুশীলন সমিতির ইতিহাস গ্রন্থে লিখেছেন যে ‘‘ঋষি বঙ্কিমচন্দ্রের অনুশীলন তত্ত্বে শারীরিক, মানসিক, নৈতিক ও আধ্যাত্মিক উৎকর্ষ সমন্বিত আদর্শ মানব গঠনের যে নির্দেশ আছে তাহাই হইল অনুশীলন সমিতির ভিত্তি।’’
সন্ন্যাসী বিদ্রোহের পটভূমিকায় লেখা আনন্দমঠ ও বন্দে মাতরম্ হল ভারতীয় জাতীয়তাবাদের বিকাশে বঙ্কিমচন্দ্রের সবচেয়ে বড় অবদানকে সবাই স্বীকার করতে বাধ্য। আনন্দমঠ উপন্যাসে ভবানন্দ সর্বপ্রথম মহেন্দ্রকে ‘বন্দে মাতরম্’ গেয়ে শোনান। দেশকে দেশমাতৃকা রূপে দেখান এখানে।ঋষি অরবিন্দের ভাষায় বন্দেমাতরম্ ধ্বনি এক নতুন ধর্মের জন্ম দিল, যা হল দেশপ্রেমের ধর্ম। বঙ্কিমচন্দ্র ভবিষ্যৎবাণী করেছিলেন, একদিন দেখিবে এই গানে বঙ্গদেশ মাতিয়া উঠিবে। বাস্তবে হয়েছিলও তাই। ১৯০৫ থেকেই বঙ্গসমেত সারা ভারতবর্ষে বন্দেমাতরম্ দেশপ্রেমের মন্ত্র। স্বাদেশিকতার প্রতীক হয়ে দাঁড়াল। অনুশীলন সমিতির আদর্শের অন্যতম উৎসও হয়ে দাঁড়ায় আনন্দমঠ ও বন্দেমাতরম্

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights