প্রিয়া সারাদ দুজনে ট্রেনের দুই লাইন বেয়ে হেঁটে চলেছি একে অপরের হা ত ধরে । মনে স্ফূর্তি উচ্ছাস আর উল্লাসে ভরপুর । পড়ন্ত দুপুরের রোদ্দুর ঝলকানি দিচ্ছে রেল লাইনের চকচকে পাতে। আমি একটু আগেই সব বাধা মুক্ত করে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে এসেছি নিজের ভালোবাসার সাথে ঘর বাঁধবো । ওরা একমাস আমাদের কথা পর্যন্ত বলতে দেয়নি ফোনটাও কেড়ে নিয়েছিলো । সেইদিনই নিজেকে বলা কথা যা ওকেও বলিনি কখনও , সকলের সামনে গলা ফাটিয়ে বলতে একটুও দ্বিধাবোধ করিনি ; যে ভালোবাসি আমি ঋভুকে ভালবাসি । কি হয়েছে তাতে ও আমাদের কাজের মাসির ছেলে । না হয় ইংলিশ মিডিয়ামে পড়েনি না হয় ওর ভালো জামা জুতো গাড়ি নেই , কিন্তু সেদিন রাস্তায় একা পেয়ে যখন ওপাড়ার অপদার্থ বদমাশ ছেলে রনি দা আমার সাথে অসভ্যতামি করছিলো ঋভু নিজের মাথা ফটিয়েও আমায় বাঁচিয়েছিলো । আমি জানতামনা ঋভু এত গম্ভীর এত রাগী । এমন মার মেরেছিলো পাজি রনিকে আর কোনোদিন আমায় একা দেখলেও রনি দা আর ওর বন্ধুরা আমার দিকে চোখ তুলে তাকায়না । আমারও আর বাপিকে তাই বলার প্রয়োজনই পড়েনি । কিন্তু বাপি যেদিন দেখলো আমরা একসাথে ফিরি কিছু না শুনেই না জেনেই ঋভুকে চড় মেরে দিলো? আমি সেদিনই নিজেকে কথা দিয়েছি যে আমি ঋভুর সাথেই বিয়ে করবো । আমরা এখন কলেজে পড়ি কেউ ছোট নই তাও ঐভাবে অপমান করেছে বাপি আমার সামনে । ঋভু জিগ্যেস করেছিল কেন তাকে মারলো বাপি ,কিন্তু আরও খারাপ কথা বলে আমার হাত ধরে টেনে ঘর বন্দী করে দিলো । একমাস আমি নিজের ঘরেই কাটিয়েছি কোনো ফোন নেই কলেজ যাওয়া নেই না আকাশ টুকুও দেখতে পেয়েছি । নিজেকে শুধু বুঝিয়েছি আমি কি চাই । আজ মা দরজা খুলে পুজো দিচ্ছিল ,আমি কোনো কিছু না ভেবে বেরিয়ে এসছি একা কোথায় যাবো ভাবিনি । কিন্তু কোথাও আশা ছিল ঋভুর সাথে দেখা হবে । দুপা রাস্তায় এগোতেই দেখি আমার আসার দিকেই তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে । কাছে এসে জিগ্যেস করলাম ‘তুমি কি করছো এখানে?’ বললো ‘আমি তো এখানে রোজ দাঁড়িয়ে থাকি যদি বের হও তাই ‘। আমি বললাম ‘ আমি বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসেছি আর ফিরবনা ‘। ঋভু আমার দিকে নিস্পলক তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষন তারপর আমার হাতটা ধরে হাটতে থাকলো ঝিলের রাস্তায় । মাঝে একটা রেলগেট পড়ে । আমরা দুজনেই চুপ ।কেবল হাঁটছি । রেলগেট আসলে আমি ওর হাত ধরে টেনে লাইনে উঠে পড়লাম । ও ও আমার সাথে তাল মেলালো । দুপুরের নির্জন রাস্তা । এদিকটা বেশ নিশ্চুপ জায়গা তেমন একটা লোক আসেনা । আমি জিগ্যেস করলাম ‘আমি তাহলে কোথায় যাবো ?’ ঋভু আমার দিকে আবার তাকালো বললো ‘কি চাও তুমি ?’ আমি নিজেকে বলা কথা আজ প্রথম বললাম ওকে । ও মুহূর্তে কখন দুপা পিছিয়ে হাসি মুখে আমার দিকে নিস্পলক তাকিয়ে আছে । আমি বললাম ‘আমি ঘর ছেড়ে এসেছি আর ফিরতে চাইনা ওই জেলে তুমি কি আমায় থাকতে দেবে তুমি কি আমায় ভালোবাসো?’ নির্জন দুপুরের পড়ন্ত রোদ্দুর আর কোকিলের কুহু ডাকে দুজন নিশ্চুপ , ও কাছে এলো আমার আজ ওর চোখে একটা অহংকার সেই বেচারা সেই দুর্বলতা নেই । আমার প্রশ্নমাখা ঠোঁটে জাপটে ধরলো প্রথম অনুভূতির আবেশ আমাদের প্রথম প্রেমের প্রথম উষ্ণতা । আমি কেবল উষ্ণ আলিঙ্গনে মুহুর্মুহু আচ্ছন্ন । আষ্টেপৃষ্ঠে প্রকৃতির প্রেমে দুজন হারিয়ে গেছি দুই ঠোঁটের আলিঙ্গনে । চমকি কাটলো প্রচন্ড বাঁশির শব্দে ,চোখ খুলে দেখি আশেপাশে ভিড় করেছে কিছু মানুষ আছে আমার বাপি- মাও আমার চোখে মুখে জলের ছিটায় ভিজে শরীরের জামাটাও । কিন্তু ঋভু কই !হঠাৎ চোখ যায় কয়েক হাত দূরে ট্রেনের দিকে ঋভু দাঁড়িয়ে ,কিন্তু ট্রেন আসছে তো আমি চেঁচিয়ে উঠলাম “সরে যাও ঋভু ট্রেন সরে যাও” কিন্তু একি ট্রেন চলে এলো ঋভু বুদবুদের মতো হাসিমুখে মিলিয়ে গেল পড়ন্ত বিকেলের ছায়ায় ।কোথায় উধাও হয়ে গেলো যেন । আমার মা সজোরেআমায় বুকে জড়িয়ে কাঁদতে শুরু করলো । কিন্তু কেন? আমার হাতের মুঠোয় কিছু আছে মনে হলো । খুলে দেখি একটা কাগজ তোমার নিজেকে বলা কথা আমি দূর থেকেই বুঝেছিলাম ঝিল তাই সেদিন তাড়াহুড়ো করে আস্তে গিয়ে রেললাইনে পা আটকে পড়ে যাই…..আর ,ভালো হয়েছে তোমায় এখন রোজ দেখতে পাই দূর থেকেই কিন্তু তুমি বাড়ি ফিরে যাও আমি তো আছিই তোমার মনে ।…
ভালোলাগলো।