google-site-verification=r3lYzE3jI5XC8igrXRKdm9HAWALrzmx6coPmyeHNww4
Spread the love

প্রাক ৫০৮ তম #পানিহাটি #দণ্ডমহোৎসব ২০২৪

ইতিহাস বলছে, হরিনাম প্রচারের উদ্দেশ্যে চৈতন্যদেব নিজে নিয়ে নিত্যানন্দ মহাপ্রভুকে পানিহাটিতে গিয়েছিলেন। ৫০৭ বছর আগের ঘটনা।রঘুনাথদাস গোস্বামী সেখানে উপস্থিত ছিলেন। হুগলি জেলার অন্তর্গত শ্রীকৃষ্ণপুরের জমিদার শ্রীগোবর্ধন মজুমদার। যার সেইসময়ে মাসিক আয় ছিল বিশ লক্ষ স্বর্ণ মুদ্রা। তাঁর একমাত্র পুত্র হলেন শ্রীচৈতন্য পার্ষদ রঘুনাথদাস গোস্বামী।তিনি নিত্যানন্দ মহাপ্রভুর আশীর্বাদ না নিয়ে সেদিন চৈতন্য মহাপ্রভুর কৃপাশীষ লাভের চেষ্টা করেছিলেন।
বিষয়টি জানা মাত্রই একটু বিরাগভাজন হন নিত্যানন্দ মহাপ্রভু । রঘুনাথদাস গোস্বামী তখন ক্ষমা ভিক্ষা চান । আর এই দণ্ড হিসেবে রঘুনাথ দাস গোস্বামীকে নিত্যানন্দ মহাপ্রভু তাদের ভক্তদের চিড়া-দধি-কলা ভোজন করানোর আবদার করলেন। যদিও আনন্দের সঙ্গে রঘুনাথ সেদিন এই দণ্ড গ্রহণ করেছিলেন। সেই থেকেই প্রতিবছর জৈষ্ঠ্য শুক্লা ত্রয়োদশীতে আয়োজিত হয় দণ্ড মহোৎসব।এই মহোৎসবে শুধু পানিহাটি নয়, সারা জেলা-সহ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বৈষ্ণব ধর্মালম্বী ভক্তরা ভিড় জমান।

পানিহাটি, গঙ্গাতীরবর্তী এক শহর। ইতিহাস বলে এটি হাজার বছরেরও বেশি পুরোনো। বিপ্রদাস পিপলাইয়ের ‘মনসামঙ্গল’, জয়ানন্দের ‘চৈতন্যমঙ্গল’, বৃন্দাবন দাসের ‘চৈতন্য ভাগবত’, কৃষ্ণদাস কবিরাজের ‘শ্রীচৈতন্য চরিতামৃত’-র মতো পুরোনো সাহিত্যে পানিহাটির নাম পাওয়া যায়।

বহু ধর্মের প্রাচীন মিলনক্ষেত্রের দৃষ্টান্ত হিসেবেও পানিহাটির খ্যাতি রয়েছে। , ভোলানন্দ গৌড়ীয় মঠ,কাঠিয়া বাবার আশ্রম, বালক ব্রহ্মচারী আশ্রম যেমন রয়েছে এখানে, পাশাপাশি রয়েছে মোল্লাহাট মসজিদ, ঘোলাবাজার মসজিদ, মানিক পির কিংবা খোনকা পিরের আস্তানা। গঙ্গার তীরের একাধিক ঘাট পানিহাটির আরেক আকর্ষণ।তাঁতপটি ঘাট, জহর সাধুখাঁর ছোট ঘাট, মালাপাড়া ঘাট,গৌরীমণি দাসের ঘাট, শ্রীগৌরাঙ্গ ঘাট, মদন বসুর ঘাট, প্যারি বোষ্টম ঘাট ইত্যাদি; । এত বেশি ঘাটের আধিক্যের জন্য,’ যতীন্দ্র মোহন দত্ত লিখেছিলেন, পানিহাটির মতো এতগুলো গঙ্গার ঘাট সম্ভবত বারাণসী ছাড়া আর কোথাও নেই। এক শতাব্দীর আগেও পানিহাটিতে প্রায় ৩৩টি ঘাট অক্ষত ছিল, একমাত্র পানিহাটিকে সেই হিসেব করলে বাংলার কাশির ফলে ভুল হবে না।

কিংবদন্তি অনুযায়ী, পানিহাটির আগের নাম ‘পণ্যহট্ট’। প্রাচীন কাল এই জায়গা ব্যবসা বাণিজ্যের জন্য খুব জমজমাট কেন্দ্র ছিল।তখন বাণিজ্যের জন্য বর্ধমানের কাটোয়া, কালনা,দাঁইহাট, ফরাসডাঙা, চুঁচুড়া, , সপ্তগ্রাম, মেদিনীপুরের তাম্রলিপ্ত; ইত্যাদি জায়গা থেকে পণ্য বোঝাই নৌকো এসে ভিড় জমা হতো পানিহাটির আমদানি ঘাটে।লোক কথা অনুযায়ী, যশোরের বিখ্যাত পেনেটি ধানের সরবরাহ এখান থেকে করা হত বলে, এই জায়গার প্রথম নাম হয় পেনটি আর এই ‘পেনেটি’ থেকেই ‘পানিহাটি’ নামটির আগমণ। আবার কারো মত হল, ‘পণ্যহট্ট’ নয়, পানিহাটির নাম এসেছে ‘পুণ্যহট্ট’ থেকে। পানিহাটির যে ঘাটে প্রথম চৈতন্যদেব পা রেখেছিলেন, সেটা শ্রীচৈতন্য ঘাট নামে পরিচিত। ১৯০৫ সালের ভূমিকম্পে এই ঘাট ভেঙে যায়। তবে যে গাছের নিচে চৈতন্যদেব এবং নিত্যানন্দ বসে ধর্মপ্রচার করেছিলেন, এই ‘অক্ষয় বটবৃক্ষ’ এখনও অক্ষত, কালের গর্ভে হারিয়ে যায়নি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights