বাংলার বিলুপ্ত প্রায় কুঁচ ফলের উপকারিতা।।।

schedule
2024-11-29 | 03:35h
update
2024-11-29 | 03:35h
person
kolkatarsomoy.com
domain
kolkatarsomoy.com

কুঁচবরন কন্যা তার মেঘবরন কেশ “…
সুন্দরী কন্যার রূপ বর্ননায় দুধসাদা আর কালো চোখওয়ালা কুঁচফলের মত গায়ের রঙয়ের উপমা দিয়েছেন কবি।
ভারতের পাশাপাশি এটি , বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, ও থাইল্যান্ড ইত্যাদি দেশে কম বেশি পাওয়া যায় । আমাদের দেশে দুই ধরনের কুঁচ দেখতে শ্বেতকুঁচ আর রক্তকুঁচ বেশি । এই দুটির ভিতর রক্তকুচ সবচেয়ে বেশি দেখা যায় । এই উদ্ভিদটি বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন নামে ডাকা হয়ে থাকে । এর নামগুলো হল রতি, রত্তি, কুঁচ, কইচ, গোটা, চূড়ামনি, শাঙ্গুষ্ঠা, গুঞ্জা, সেীম্যা, শিখন্ডী, কৃষ্ণলা রক্তিকা মাণচূড়া প্রভূতি । গাছটি মূলত লতানো আর অনেক জায়গা নিয়ে বেড়ে উঠে । এর পাতা দেখতে অনেকটা তেতুল পাতার মতো দেখতে । এর ২০-৪০ বড়সড় পাতা থাকে । হেমন্তকালে অনেকটা শিম ফুলের মতো দেখতে গোলাপি ছোপলাগা ফুলে ভরে যায় । ফল দেখতে কিছুটা শিমের মত । ফলের ভিতর ছোট ছোট বীজ বা দানা থাকে । রক্তকুঁচের বীজ উজ্জ্বল লালবর্ণের আর মুখে কালে ফোঁটা । আর শ্বেত কুচের বীজের রঙ দুধে আলতা মেশানো রঙে সমুজ্জ্বল।
এর ইংরেজি নাম – Indian Liquorice / Crabs Eye.
বাংলাদেশে ২০১২ সালে এটিকে এক সংরক্ষিত উদ্ভিদ হিসেবে আইন প্রণয়ন করা হয়েছে।
কিন্তু এখন চোখে দেখা তো দূরের কথা নতুন প্রজন্ম হয়ত এই নামটির সঙ্গেও পরিচিত নয়। দু-একটি পুরাতন সোনার দোকানে খোঁজ করলে হয়তো এর দেখা পাওয়া গেলেও যেতে পারে।
এই অদ্ভুত সুন্দর চোখওয়ালা কুঁচফল সাদা, কালো সহ নানা রঙয়ের হলেও সবচেয়ে বেশি পাওয়া ‌যায় লালকুঁচ।
কালের গর্ভে ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে এই কুঁচ।
এটি একটি লতানো উদ্ভির এক সময় বাড়ির বেড়া সহ যত্রতত্র এ গাছ পাওয়া যেত। হয়তো এখনও গ্রাম বাংলার বিশেষ কোনো বনে বাদাড়ে দুএকটি এই কুঁচ লতার সন্ধান পাওয়া যেতেও পারে । নগর সভ্যতার করাল কুঠারাঘাতে আগামীতে এ দুর্লভ বাংলার রূপসী ফলদায়ী চমৎকার উদ্ভিদটি হয়তো একদিন সম্পূর্ণ বিলুপ্ত হয়ে যাবে।
এই গাছটি লতানো এবং বহু বিস্তৃত শাখা-প্রশাখা বিশিষ্ট। এর শাখা বেশ নরম। পাতার দৈর্ঘ্য ২-৩ ইঞ্চি। প্রতিটি পত্রদণ্ডে ২০-৪০টি পাতা থাকে। বসন্তকালে পাতাগুলি ঝরে যায়। এর পুষ্পদণ্ডে প্রচুর ফুল ধরে। ফুলের বাইরের দিক পশমের মতো। ফুলগুলোতে লাল বা সাদা বর্ণের আভা দেখা যায়। এর ফল শুঁটির আকারে জন্মে। শুঁটিগুলো ১ থেকে ২ ইঞ্চি লম্বা হয়। শুঁটিগুলো শুকোলে এর বীজগুলো পরিপক্ব হয়ে লাল, কালো, সাদা ইত্যাদি নানা রঙের হয়ে থাকে। শীতের সময় এর ফুল হয় এবং গ্রীষ্মকালে ফল হয়।
কুঁচফলের বীজের দুধে-আলতা রঙ থেকেই কুঁচবরণ কন্যার নামকরণ করা হয়েছে বলে ধারণা করা হয়।
গুঞ্জ ফুলের মালা’ কথাটাও এই কুঁচ থেকেই এসেছে বলে অনেকে মনে করেন।
একশ্রেনীর আদিবাসীরা একসময় এই কুঁচএর লতা দিয়ে নানা ধরনের ঝুরি তৈরী করতো। কুঁচ এর পাতা, শিকড়, ছাল থেকে বিভিন্ন রকম ভেষজ ঔষধ পাওয়া যেত।
কুঁচ এর ভেষজ উপকারিতা সম্পর্কে জানে নেওয়া যাক
মাথাব্যথায় :
মাথাব্যথা হলে, সাদা কুঁচফল নিয়ে সেটা গুড়া করে ছেকে নিয়ে নিতে হবে । এই গুড়া নস্যি মতো করে নিলে মাথার ব্যাথা কমে যায় ।

বমি আনতে :
বেশি বা বিষাক্ত কিছু খাওয়া হয়ে গেলে , বমি আনার জন্য কুঁচের মূল ৩-৪ গ্রাম পরিমাণ বেটে এক কাপ জলে মিশিয়ে খেলে বমি হয়ে যায় ।

পেটে শূল বেদনায় :
পেটে শূল বেদনায় এর পাতা থেতলে ১০-১২ ফোটা রস আধা কাপ জলের সাথে মিশিয়ে খেলে সেরে যায়।
মাথার টাক পড়লে :
কুঁচ পাতা বেটে নিয়ে মাথায় ভালোভাবে প্রলেপ দিলে টাকে মাথায় ভালো উপকার পাওয়া যায় ।

চর্মরোগ :
কুঁচ গাছের মূল বেটে রস বার করে । এটি ভালো করে গায়ে মাখতে হবে । এতে চর্মরোগ ভালো হয়ে যায় ।

কুঁচফলের বাইরের আস্তরণ ভীষণই কঠিন। বীজের ভিতরের অংশ মারাত্মক বিষাক্ত যা কোনো গবাদি পশু খেলে এর থেকে মৃত্যুর কারণও হতে পারে।
এই কুঁচের ফলের বৈশিষ্ট্য হল এর পরিণত বীজগুলির ওজন সাধারণত একই হয় এবং তা বহুবছর ধরে অপরিবর্তিত থাকে এই কারনে বাংলায় এক সময় সোনার দোকানে স্বর্ণের ওজনের ক্ষেত্রে স্বর্ণকাররা এই কুঁচফল ব্যবহার করতেন। প্রতিটি কুঁচের ওজনকে ১ রতি বলা হতো। এই এককের বিচারে ওজনের যে এককগুলো নির্ধারিত হতো, তা হলো…….
১ কুঁচ=১ রতি
৮ রতি=১ মাশা
১২ মাশা = ১ তোলা
১ তোলা = ১১.৬ গ্রাম
একসময় কুঁচফল নারীদের শোভাবর্ধনে অলঙ্কার ও পুতুলের চোখ তৈরীতে খুবই ব্যবহৃত হতো। সাদা, কালো, লাল ও গোলাপি রংয়ের এই ফল দেখতে পাওয়া যায়।
যদিও সে সব অতীত। প্রকৃত সংরক্ষণের ব্যবস্থা না করলে অচিরেই হয়তো হারিয়ে যাবে বাংলার ঐতিহ্য বহনকারী অনন্য সুন্দর ফলের এই বিরল উদ্ভিদটি।

Advertisement

Imprint
Responsible for the content:
kolkatarsomoy.com
Privacy & Terms of Use:
kolkatarsomoy.com
Mobile website via:
WordPress AMP Plugin
Last AMPHTML update:
13.12.2024 - 04:58:27
Privacy-Data & cookie usage: