সেসময় বৃন্দাবনে যাওয়া ভীষণ কষ্টের । হেঁটে যাওয়া ছাড়া অন্য উপায় নেই। তার ওপর রাস্তায় দস্যুর ভয় ,ডাকাতের ভয়,দানঘাটিতে রাজার সেপাইদের কর আদায়ের অত্যাচার,বন্য প্রাণীর ভয়, ইত্যাদি নানা প্রকার বিপদ। বৃন্দাবনে কেউ গেলে আর তিনি ফিরতেন না। জীবনের বাকিটা সময় ওখানেই কাটিয়ে দিতেন। বলা হত যে, মরতে যাচ্ছে বৃন্দাবনে।
একজন শাস্ত্রজ্ঞ গোস্বামী প্রভুর বাসনা হল যে তিনি কিছুদিনের জন্য বৃন্দাবন ঘুরে আসবেন। কিন্তু, তাহলে তাঁর প্রয়োজন একজন সাথীর। একা একা গিয়ে , আবার ফিরে আসা খুবই ভয়ের এবং সমস্যারও । সাথী থাকলে ভালো হয়। তিনি অনেককে সাধলেন তাঁর সাথে বৃন্দাবন যাবার জন্য। কিন্তু, কেউ রাজী হল না কষ্ট করে অতদূরের পথ যেতে। অবশেষে মহেশ নামের এক কমবয়সী যুবকের কথা মনে এল গোস্বামী প্রভুর। তিনি বললেন, “হ্যাঁ রে , মহেশ , আমার সাথে বৃন্দাবনে যাবি?” মহেশ বললো,” সে কী প্রভু , অত কষ্ট করে বৃন্দাবনে যেতে যাব কেন বলুন তো! আছে টা কী আর ওখানে! সেই কৃষ্ণও আর নেই , সেই রাধাও আর নেই যে গিয়ে দেখতে পাব।তাহলে গিয়ে শুধু শুধু দুঃখ পাবো কেন তাঁদের না দেখতে পেয়ে।” মহেশের কথা শুনে গোস্বামী প্রভু বললেন, “সে কী রে ! কী কথা বলিস তুই! তাঁদের লীলা যে নিত্য । সেকালে যেমনটা ঘটতো , এখনও তেমন প্রতিদিন ঘটে । রাধাকৃষ্ণ তো সশরীরে বর্তমান বৃন্দাবনে এখনও। অমন কথা আর কক্ষোনো মুখে আনিসনিকো যে তাঁরা তখন ছিল, এখন আর নেই।” মহেশ বললো, “তাহলে প্রভু আপনি বলছেন যে, বৃন্দাবনে গেলে তাঁদের দর্শন পাব আমি!” গোস্বামী প্রভু বললেন, “একদম পাবি।আলবাৎ পাবি।”
মহেশ–“তাহলে প্রভু , আমি যাব আপনার সাথে বৃন্দাবন। বলুন কবে যেতে হবে আমায়।”
গোস্বামী প্রভু দিন ঠিক করলেন। নির্দিষ্ট দিনে তাঁরা যাত্রা করলেন। অনেক দিন পর যেদিন বৃন্দাবনে এসে পৌঁছালেন, সেদিন মহেশের আনন্দ আর ধরে না। মালপত্তর নামিয়েই সে বললো, “যাই গিয়ে কৃষ্ণ দর্শন করে আসি আগে । আচ্ছা , প্রভু ,আমি কোথায় গেলে তাঁকে দেখতে পাব? তিনি এখন কোথায় থাকতে পারেন বলে আপনার মনে হয়?”
গোস্বামী প্রভু তো মহেশের কথা শুনে অবাক। তিনি বোঝালেন,”ওরে,এখন এত ব্যস্ত হতে হবে না তোকে। এত দূরের পথ পার করে এসেছিস , আগে স্নান-খাওয়া কর, পরে তো তাঁর সাথে দেখা করতে যাবি।” মহেশ সরল স্বভাবে বললো ,”তা কী করে হয় , প্রভু! বৃন্দাবনে এসেছিই তো তাঁকে দেখতে। আর , তাঁকে না দেখেই খেয়ে নেব ! না, না , তা হয় না। প্রথম কাজ আগে কৃষ্ণ দর্শন করা। তারপর বাকি সব। আপনি বলুন প্রভু কোন দিকে গেলে তাঁর দেখা পাব আমি?” গোস্বামী প্রভু পড়েছেন মহা ফ্যাসাদে । কী উত্তর তিনি দেবেন এর ! মনে মনে ভাবছেন , “এই বোকা মহেশটাকে এখন বোঝাই কী করে!” ………….(ক্রমশঃ)
———নম্রানতা
ড. রাধাবিনোদিনী বিন্তি বণিক