google-site-verification=r3lYzE3jI5XC8igrXRKdm9HAWALrzmx6coPmyeHNww4
Spread the love

কলমে – মানব মন্ডল

শহরের বড় বড় মন্ডব, নানারকম আলোর নানা থিম সেজে উঠেছে। গ্রাম বাংলার পূজা বৈশিষ্ট্য অন্য রকম।সোনাপেতা, পশ্চিম মেদিনীপুর গ্রামেএর পূজা দেখুন।

মা দুর্গার কটি হাত? আমরা জানি ১০ টি তাই না! কিন্তু সব সময় দশভুজা নন দেবী দুর্গা কখনও স্বপ্নাদেশে, কখনও কুলাচার মতে দেবী লুকিয়ে ফেলেন তাঁর আটটি হাত। আবার কখনও আরও আট হাত বাড়িয়ে হয়ে ওঠেন অষ্টাদশভুজা। তিনি কখনও অষ্টভুজা, কখনও শিল্পের সাম্য ভেঙে ত্রিভুজাও হয়ে যান।

হুঁ, সোনাপেতার মা এর হাত ১৮টি, প্রায় ৫০০ বছরের পুরানো রায় বাড়ির এই দুর্গাপূজা, ৯ পুরুষ ধরে চলে আসাছে এই পূজা। এখনো সেই পুরানো মাটির দুর্গা মণ্ডপে হয়ে থাকে।
আসলে দেবী উগ্রচণ্ডার অষ্টাদশভুজা রূপের মহিষমর্দিনী মূর্তি বিভিন্ন মন্দিরগাত্রে টেরাকোটা কাজে দেখা গিয়েছে। কিন্তু এমন একটি গৃহস্থবাড়ির উঠানে এই দুর্গার পূজা বিরল এবং ব্যাতিক্রম। পশ্চিম মেদিনীপুরে কেশপুরের গড় সোনাপোতা গ্রামের এই অষ্টাদশভুজা দুর্গার পুজো অন্যান্য পুজো থেকে আলাদা। কথিত আছে এক সময় মেদিনীপুরের এই অঞ্চল ছিল ঘন জঙ্গলে পরিপূর্ণ। আরণ্যক বিপদ-আপদ থেকে রক্ষা পেতে স্থানীয় মানুষজন এই দেবী দুর্গার আরাধনা করতেন। অরণ্যের রক্ষয়িত্রী দেবী তাই অরণ্যানী দুর্গা নামে পরিচিত । এমনই ঐতিহ্যমণ্ডিত পুজো দেব পরিবারের আঠারো হাতের দুর্গাপুজো। চণ্ডীমঙ্গল’ কাব্যের রচয়িতা কবিকঙ্কন মুকুন্দরামের লেখাতেও এই পুজোর কথা পাওয়া যায় বলে দাবি অনেক র । এক সময় মুকুন্দরাম চক্রবর্তী এই পরিবারে শিক্ষক হিসেবে যুক্ত ছিলেন। তিনি দুর্গাপূজা করতে আগ্রহী ছিলেন বলে শোনা যায়।এই পরিবারে তাঁরই প্রচেষ্টায় এই ব্যতিক্রমী পুজোর প্রচলন হয় । শ্রীশ্রীচণ্ডী মতে তৈরি হওয়া এই মূর্তিতে আদলে প্রাচীন লোকায়ত শিল্পের ছাপ স্পষ্ট। আঠারো হাতে থাকে লাঠি, ঘণ্টা, আয়না, তির, ধনুক, পাকানো দড়ি, ডমরু, ত্রিশূল, বজ্র, খড়্গ, ঢাল, শঙ্খ, চক্র, গদা, পাশ, অঙ্কুশ, শূল ও অসুরের চুলের মুঠি। চালচিত্রে দেবীর পুত্র-কন্যারা অনুপস্থিত। দেবীর শাড়ি, গয়না সবই মাটির। দেব পরিবারে পুজোয় বাজে নহবত। ঐতিহ্যমেনে এখনও সন্ধিপুজোয় বাড়ির কোনও সদস্য হাতের আঙুল কেটে রক্ত দিয়ে পুজো করা হয়। পুজোর চার দিন অঞ্চলবাসী মানুষজন আসেন তাঁদের বাদ্যযন্ত্র নিয়ে উপস্থিত হন এখানে।সকলে সাধ্যমতো দেবীকে নাচে গানে খুশি করার চেষ্টা করেন।
ছবি Anirban Pan

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights