কলমে – মানব মন্ডল
হাওড়া জেলার বালিয়া পরগনার জগৎবল্লভপুর গ্রামের সিংহবাহিনী দশভুজা নন, অষ্টভুজা রূপে পূজা পান। যদি গ্রামের একমাত্র আরাধ্যা দেবী। কারণ হাওড়ার জগৎবল্লভপুরের নিজবালিয়া, গড়বালিয়া, যমুনাবালিয়া, নিমাবালিয়া ও বাদেবালিয়া, বালিয়া-ইছাপুর, বালিয়া-রামপুর, বালিয়া-প্রতাপপুর, বালিয়া-পাইকপাড়া ,মানে বালিয়া পরগনায় অন্য কোন দুর্গার আরাধনা নিষিদ্ধ। প্রায় ৬০০ বছর এই রীতি চলে আসছে। মুকুল রাম চক্রবর্তীর চণ্ডীমঙ্গল বা বলরাম চক্রবর্তীর কালিকামঙ্গলে রয়েছে দেবী সিংহবাহিনীর উল্লেখ আছে।
মুঘল আমলে সম্রাট আকবরের শাসনকালে অবিভক্ত বাংলা ও নানা প্রদেশে বিভিন্ন পরগনা গড়ে তোলেন। তখন এই পরগনার মধ্যে বালিয়া গ্রাম ছিল প্রশাসনিক কেন্দ্রস্থল। প্রশাসনিক ও অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসাবে আকবরের আমল থেকেই পরিচিত জগৎবল্লভপুরের বালিয়া পরগনা।
লোক কথা অনুযায়ী আছে,পঞ্চদশ খ্রিস্টাব্দে বর্ধমানের এক রাজা বালিয়া পরগনায় আক্রমণ করেছিলেন বর্ধমানের মহারাজা। বর্ধমানের সেই মহারাজা স্বপ্নে দেবী সিংহবাহিনীর দেখা পেয়ে জগৎবল্লভপুরের নিজবালিয়া গ্রামে সুবিশাল মন্দির নির্মাণ করে সিংহবাহিনী দেবীর মূর্তি প্রতিষ্ঠা করেন। দেবীর সেবার জন্য ৩৬৫ বিঘা জমি দান করেছিলেন। বর্ধমানের মহারাজার দেবী সিংহবাহিনী ছিলেন কূলদেবী।
লোক কথা আরো বলে স্ এক সময় এলাকায় কলেরা মহামারীর আকার ধারণ করেছিল। পরিত্রাণ পেতে দেবী সিংহবাহিনীর আরাধনা শুরু করেন গ্রামবাসীরা। স্বপ্নাদেশ পাওয়া দেবী নিমকাঠে দিয়ে তৈরি।তাই গ্রামে নিমকাঠ পোড়ানো হয় না। কোনও পরিবারের শুভকাজে এই দেবীর অনুমতি নেওয়ার রীতি প্রচলিত আছে গ্রাম গুলো তে।
আরো একটি জনশ্রুতি রয়েছে, এই দেবীকে নিয়ে। নাকি দেবশিল্পী বিশ্বকর্মা এক সাধারণ কুমোরের রূপ ধরে বন্ধ মন্দিরকক্ষে দেবীমূর্তি তৈরি করেন। তাই দেবীর নির্দেশ পেলে তবেই মূর্তির অঙ্গরাগ হয়। শ্বেত সিংহের পিঠে দাঁড়ানো সিংহবাহিনী কাঞ্চনবর্ণা। ছ’টি হাতে বিবিধ অস্ত্র, বাকি দু’টি হাতে বরাভয়। দেবীর পিছনে চালচিত্রের মাথায় নন্দী সহ মহাদেব এবং দুই দিকে দশমহাবিদ্যা ও বিষ্ণুর দশ অবতার ছবি আঁকা আছে। ১২ বছর অন্তর মূর্তি রং করা হয় ।আটচালা আকৃতির দেবীর মন্দির। এখানকার স্থানীয় পুকুরের মাছ দেবীকে প্রতিদিন ভোগে নিবেদন করা হয়।
এলাকার মানুষজন দুর্গা পূজার কয়েকদিন মা সিংহবাহিনীকেই দুর্গা রূপে পূজা করেন ও অঞ্জলি দেন। নবমীতে হয় বলিদান।দেবীর মূল উৎসব বৈশাখ মাসের সীতানবমীতে, পরের দিন অন্নকূট। দু’দিনের এই উৎসবে ১২টি গ্রাম এক জায়গায় মিলিত হয়।