এক দশক আগেই শহরতলীর সিনেমা হলগুলো ভ্যানিস হয়ে গেছে । এবার কলকাতার হৃদয় অসুখটার খপড়ে পড়লো। চৌরঙ্গির সেই গ্ল্যামারও শেষ, ধর্মতলা যেন নুন ছাড়া সইদ্ধ ডিম।
এটা সময়ের ঘটনা বাঙালি এক পাত্তর হুইস্কি অথবা অনাদির মোগলাই খেয়ে সিনেমা দেখতে হলে ঢুকত ব্ল্যাকে টিকিট কেটে। আবার কেউ কেউ কয়েকদিন আগেই আ্যডভান্স টিকিট হলে চলে যেত সটান হলে। সিনেমা শো ভাঙার পর রেস্তোরায় খাওয়া দাওয়া, নিউ মার্কেটে শপিং করা, ফেরার সময় হাতে থাকতো গরম প্যাটিস, কেক আরো কতকিছু ট্রাম ধরে সিনেমার সেই গল্প করতে করতে বাড়ি ফেরা মধ্যএ ছিলো একটা আনন্দ।
সেই সময় এলিটিসিজম রোম্যান্টিসিজমের আঁতুড়ঘর ছিল ‘গ্লোব’ । দুটি শব্দের চাবুক চালানো শিহরণ ছিল যার শরীরে , লিন্ডসে স্ট্রিটে ঢুকে ডান হাতের ছোট একচিলতে গলি দিয়ে ঢুকে বাঁ হাতে ছিল কাউন্টার আর ডান হাতে বার , দোতলায় কাচের দরজা ঠেললে আরও একটি বার ,সেখানেই দরজা ঠেলে ভিতরে পুরু গালিচা পথ নিয়ে যেত গদি মোড়া সিটে , ডিমার কোন অলক্ষে অফ হত টেরই পাওয়া যেতো না।অন্ধকারের রূপকথায় তখন গ্রেগরি পেক ,আন্থনি কুইন, ওমর শরিফ , উরি উরি বাবা কী দারুণ ।মা কালি দিব্বি সেদিনের সেই গ্লোব আজকের মাল্টিপ্লেক্সগুলোকে ডজন গোল হারিয়ে দিতে পারত । গ্লোবের সামনে আজকের মাল্টিপ্লেক্সগুলো যেন হঠাৎ দু’ পয়সা করে ফুটানি মারা ছিঁচকের দল, কিন্তু হায় এখন সেখানে আরতি নামে একটি সংস্থা শপিং মল বানিয়েছে।যেখানে ব্র্যান্ডেড জাঙ্গিয়া বিক্রি হয়।
আর গ্লোব নামটিকে ছুঁয়ে রেখে ,একটি পুচকি হল বানাচ্ছে ।বড়জোর সেটাকে ভিডিয়ো পার্লারেরই বড়ভাই বলা যেতে পারে।
কলকাতায় থেকে নীল সমুদ্র দূরত্ব অনেক খানি।তবুও তার একটি লাইটহাউস ছিল । তার দোতলায় পরম যত্নে রাখা ছিল একটি পিয়ানো । কোনও দিন একটি আঁচড়ও লাগেনি তাতে ।এক মন সম্ভ্রম নিয়ে সেদিকে তাকিয়ে থাকত হলিউডি সিনেমাখোর বাঙালি । হয়ত তাতে কখনও তুলতুলে আঙুলে রিনরিনে সুর তুলত কোনও রাজকন্যে । কতো আন্তর্জাতিক সিনামা হয়েছে সেখানে।এখন সেখানে ড্রেস মেটিরিয়ালের কেচ্ছা।লাইট হাউস আর বাতি জ্বেলে পথ দেখায় না ।কলকাতাটাই যে ডুবতে বসেছে।
গা ঘষাঘষি করে নিউ এম্পায়ার ছিলো ।কোনও এক মহাজাগতিক বিস্ময়ে সেটি এখনও টিকে রয়েছে ইম্পেরিয়াল হাউস যদিও।শ্বেত পাথরের বাঁকানো সিঁড়ি উঠে গিয়েছে ।বেলজিয়াম গ্লাসের মিরর ।দেওয়ালে হিচককের দ্য বার্ড, রোমান হলিডের অদ্রে হেপবার্নের, come september এর জানা লোলোব্রিগেডার বাঁধানো পোস্টার। ভিতরে হোয়ার ইগলস ডেয়ার । রিচার্ড বার্টন, ক্লিন্ট ইস্টউড।
আর ছিল এলিট একমাত্র যেখানে ‘Ginger Beer’ (non alcoholic) পাওয়া যেত। অনেক কম বয়সে ঐ Beer খেয়ে একটা নিষিদ্ধ আনন্দ উপভোগ করেছে ।একজন জুতো ব্যাবসায়ী ওখানে বোধহয় জুতোর শোরুম করবেন।
প্রাক ইন্টারনেট আর ইন্টারনেট উত্তর সময়ের মধ্যে কলকাতার চৌরঙ্গির সিনেমা পাড়া নিশব্দে চুরি হয়ে গেল।
রোম্যান্টিসিজমের কফিনে পেরেক পুঁতে দেওয়া হল । কী বা পাবার আছে আর এই আধমরা কলকাতা থেকে?