বাংলা সংগীত বাঙালির আয়ুধ#
বিশ্বজিৎ সরকার
হাজার বছরের বাংলা গান, বাঙালি জাতির বা যে কোন জনপদাবলীর হাতিয়ার হয়ে উঠুক গান।প্রথম উঁকিঝুঁকি দি প্রথম ভাষা ছবি,যে কোন লিপিই একপ্রকার ছবি আঁকা।পাশ্চাত্য সংগীত বলতে আজ আমরা যা বুঝতে চেষ্টা করতে চাইছি বা ইতিহাস যা বলে থাকেন তা হল পাশ্চাত্য সংগীতের শুরু প্রাচীন মিশরের সংগীতকলার অনুসরণে। মিশরবাসীরা খ্রিস্টের জন্মের পাঁচশো বছর আগেই বিঞ্জানসন্মত রীতিতে সংগীত চর্চা করতেন।
বর্তমান সময়ে সংকীর্ণ মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প যখন মানবসমাজে সম্প্রীতির সংকটকে ক্রমশ ঘনীভূত করে তুলতে চাইছে তখন বর্তমানে সমস্ত রাজনৈতিক দল হাতিয়ার করছে, প্রচারের একমাত্র মাধ্যম হিসাবে গানকে, এটা ভালো গুণ, ভালো গান নাকি খারাপ গান সেটা গৌণ।
বঙ্গভঙ্গের আগে ও পরে যে কোন রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের সঙ্গে বিশেষভাবে যুক্ত গানই ছিলো বাংলা ও বাঙালির একমাত্র হাতিয়ার।সংগীত ছায়াছবির হাত ধরেননি , ছায়াছবি আবিষ্কারের পর ছবি জনপ্রিয় হওয়ার জন্য সংগীতের হাত ধরেছেন। কে বেশি স্বাবলম্বী? গীতিকার ও সুরকার রজনীকান্ত সেন(১৮৫৮-১৯১০) লিখেছিলেন, ‘মায়ের দেওয়া মোটা কাপড় মাথায় তুলে নে রে ভাই, / দীন দুখিনি মা যে মোদের তার বেশি আর সাধ্য নাই ‘। আর একটা গান – ‘ আমরা নেহাত গরীব, তবু আছি সাতকোটি ভাই জেগে ওঠো ‘।এই গানগুলো ততটা শোনা যায় না। বাংলাদেশের জাতীয় সংগীতের শেষ লাইনগুলো গাওয়া হয় না, ‘ আমি পরের ঘরে কিনব না আর ভূষণ বলে গলার ফাঁসি ‘ অদ্ভুত, কিন্তু কেন? দ্বিজেন্দ্রলালের ‘ধনধান্যপুষ্পেভরা’ গানে নিজের জন্মভূমিকে ‘সকল দেশের সেরা ‘ বলা কি অণ্যায়? নিশ্চয়ই না, তা যদি হতো তা হলে মেদিনীপুর, পুরুলিয়া, হুগলি,বীরভূম থেকে আসা মানুষগুলো বলতে পারতো কি আমি আমার দেশে ফিরে যাচ্ছি বা বিহার বাসী কোন মানুষ! আমরা জানি যে কখনও আত্মগর্ব ও দেশগর্বকে এমন মাত্রায় নিয়ে যেতে পারে, যাতে অন্যদের তুচ্ছ করার একটা প্রবণতা এসে যেতে পারে। তবুও বলবো বাঙালির এই সময়ের জাতীয়তাবাদী আন্দোলন সঠিক,না হলে বহিরাগত হিন্দি সাম্রাজ্যবাদী দল বাঙালি জাতিকে পদদলিত করবেন। তাই ঝাঁঝালো কন্ঠে বলি, এইতো আমাদের ঠোঁট উচ্চারণ, আমরা আমাদের মাতৃভাষায়, মাতৃভাষা বাঙালির প্রথম আয়ুধ।
‘সার্থক জনম আমার জন্মেছি এই দেশে’।
( ঋণ বহু পঠিত বই ও আমার দেখা ও কান পেতে শোনা)