ট্রাম গাড়ি নিয়ে কথা হতেই মনে পড়লো টানা রিক্সার কথা।কলকাতার মানুষ পুরনোকে বর্জন না করে, তাকে আপন করে রাখা আশ্চর্য মমতায় ঐতিহ্য কথা মনে রেখে।এক শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে, হাতে টানা রিকশা কলকাতার শহরের পথ-দৃশ্যের বৈশিষ্ট বলতে পারেন। রিকশা গুলো আজও কলকাতার সামাজিক কাঠামোর একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ।তবে চা, ট্রাম, হাতে টানা রিকশা গথিক স্থাপত্য, রসগোল্লা , ফুটপাতে খাবার হল কলকাতার ঐতিহ্য।
রিকশা’ শব্দটি জাপানি শব্দ ‘জিন-রিকি-শা’ যেখানে জিন অর্থ মানুষ, রিকি অর্থ শক্তি এবং শা অর্থ যান- অর্থাৎ মানব-চালিত যান) থেকে উদ্ভূত হয়েছে। ১৮৬৯ সালে জাপান রিকশা আবিষ্কার করে।তাই ব্রিটিশ উপনিবেশ সভ্যতার প্রান ভমরা কলকাতায় রিকশা চালু হয়ে যায় এক শতাব্দী আগেই।
তবে হাতে-টানা রিকশা প্রথম সিমলায় চালু করা হয়েছিল কয়েক দশক আগে , যা ব্রিটিশ রাজের গ্রীষ্মকালীন রাজধানী হিসাবে কাজ করেছিল, কিন্তু সিমলায় এর ব্যবহার পাহাড়ি পথের কারণে সীমিত ছিল। হাতে টানা রিকশা জনপ্রিয় হলো ১৯১৯ সালে থেকে।ব্রিটিশরা হ্যাকনি ক্যারেজ অ্যাক্ট পাস করেছিল, যা কলকাতায় যাত্রী পরিবহণের মাধ্যম হিসাবে হাতে টানা রিকশা ভাড়া করার অনুমতি দেয়।
ইংরেজরা আসার আগে বাংলায় পালকির চল ছিল। কিন্তু তাতে খরচও হত ভালই।তাই ধনী বা শাসকশ্রেণির লোকেরাই মূলত পালকি চড়ার বাবুয়ানি দেখাতে পারতেন। কখনও অসুস্থ ব্যক্তিকে নিয়ে যাওয়ার জন্যও অবশ্য পালকির প্রয়োজন হত।
কলকাতায় এক ইহুদি ব্যবসায়ী১৮৯০-এ চিন থেকে জাপানি রিকশার কাঠের সংস্করণটি ব্রিটিশ ভারতের তৎকালীন রাজধানী কলকাতায় প্রথম আমদানি করেন । এর পর ১৯৩৩-এ ৬০০০ টানা রিকশাকে পাকাপাকিভাবে লাইসেন্স দেওয়া হয়। এর।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে, এশিয়ায় ঔপনিবেশিকতাবাদ হ্রাস পায় এবং হাতে-টানা রিকশা ব্রিটিশ উপনিবেশগুলিতে ধীরে ধীরে ব্যবহার করা বন্ধ হয়ে যায়। চীনেও কমিউনিস্ট সরকার রিকশা ব্যবহার নিষিদ্ধ করে।
মানবিক কারণে ২০০৬ সালে, পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ঘোষণা করেছিলেন যে টানা রিকশা নিষিদ্ধ করা হবে আইন করে বন্ধ হওয়া সত্ত্বেও উত্তর কলকাতায় বড়বাজার থেকে শিয়ালদহ পর্যন্ত হাতে টানা রিকশার আধিপত্য এতটুকুও কমেনি। বড়বাজার, কলেজ স্ট্রিটের বইপাড়া বা বৈঠকখানা বাজারের মতো জায়গায় হাতে টানা রিকশাই সওয়ারি ও পণ্য– দুইয়ের পরিবহণ চালিয়ে যাচ্ছে।