google-site-verification=r3lYzE3jI5XC8igrXRKdm9HAWALrzmx6coPmyeHNww4
Spread the love

শোনা যায় প্রাচীন রোমান যুগেও সম্ভ্রান্ত পরিবারের লোকেরা বিশেষভাবে দক্ষ ভৃত্যদের চাকরি দিতো শুধুমাত্র তাদের দাঁত পরিষ্কার করতে! আর ফরাসি দন্ত চিকিৎসকেরা ১৭০০ বা ১৮০০ শতকের শুরুর দিকে টুথব্রাশ ব্যবহার করার ব্যাপারে গণ সচেতনতা তৈরি করেন।
সাড়ে পাঁচ হাজার বছর আগে থেকে টুথব্রাশ নামক বস্তুটি মানব সভ্যতায় অন্তর্ভুক্ত হলেও আধুনিক যে টুথব্রাশ আপনি ব্যবহার করেন, সেটা চালু হয়েছে মাত্র একশ আগে। খ্রিস্টের জন্মের ৩৫০০-৩০০০ বছর আগে ব্যাবিলন এবং মিশর দেশের মানুষেরা সর্বপ্রথম দাঁত মাজার জিনিসপত্র তৈরি করে। তারা গাছের ছোট ডালকে ঘষে ক্ষয় করার মাধ্যমে তন্তু বের করে দাঁত পরিষ্কার করার এক ধরনের জিনিস বানিয়েছিলো। এটি ঠিক টুথব্রাশ নয়, বরং টুথস্টিক বা মেসওয়াক। ঠিক এদেশে আমরা নিম গাছের ডাল ভেঙে দাঁতন বানিয়ে দাঁত ঘষি। এটার নামই মেসওয়াক! প্রায় ১৬০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে চীন দেশে উদ্ভাবিত হয় “চিবিয়ে ভর্তা করার কাঠি” বা “chewing sticks”। এটি তৈরি করা হতো সুগন্ধিযুক্ত গাছের ডাল দিয়ে। এর কাজ ছিলো মুখের ভেতরকার দূর্গন্ধ দূর করা।
পরে চীনারা ১৪৯৮ সালে শূকরের ঘাড়ের শক্ত ছোট লোম দিয়ে তৈরি করেছিলো এক ধরনের টুথব্রাশ। এই লোমগুলো জোড়া দেওয়া হয়েছিলো হাড় বা বাঁশের সাথে। ফলে হাড়/বাঁশ কাজ করতো ব্রাশের হাতল হিসেবে। চীনাদের দেখে টুথব্রাশ তৈরি করলো ইউরোপ। ইউরোপিয়ানরা বোধহয় শূকরের শক্ত লোম বদলে তারা ঘোড়ার নরম লোম দিয়ে ব্রাশ বানালো।
আধুনিক নকশার টুথব্রাশ ব্যবহার করা হয়, সেটি তৈরি হয়েছিল ১৭৮০ সালের দিকে। উইলিয়াম অ্যাডিস (William Addis) একটি ব্রাশ তৈরি করেন, যেটার হাতলটা বানানো হয়েছিলো বাছুরের হাড় বাঁকিয়ে। আর তন্তুর অংশটা তিনি শূকরের লোম দিয়েই বানিয়েছিলেন। ওয়ালেস ক্যারোদার্স ১৯৩৫ সালে কৃত্রিম তন্তু “নাইলন” উদ্ভাবন করলেন। তাই ১৯৩৮ সাল থেকে পশুর লোমের বদলে নাইলন দিয়েই টুথব্রাশের তন্তুর অংশটা তৈরি হতে লাগলো। এরপর তৈরি হলো আধুনিক টুথব্রাশ।
ভারতীয় উপমহাদেশ এবং চীনে টুথপেস্টের ব্যবহার চালু হয় খ্রিস্টের জন্মের প্রায় ৫০০ বছর আগে থেকে। কিন্তু আধুনিক টুথপেস্ট তৈরি হলো ১৮৫০ সালের দিকে গিয়ে সাবানের সাথে যোগ হলো চক। অবশ্য ১৮৫০ সালের আগে যে টুথপেস্ট তৈরি হতো, সেগুলোকে পেস্ট বলা আদৌ ঠিক হবে না । কারণ সেগুলো ছিলো পাউডার! কিন্তু ১৮৫০-এর দশকে সাবানের বদলে সোডিয়াম লরেল সালফেট (sodium lauryl sulphate) বা এর মতো অন্যান্য উপাদান ব্যবহৃত হতে শুরু করলো। ফলে পাউডারের বদলে উৎপন্ন হলো মসৃণ পেস্ট বা ক্রিমওয়ালা তৈলাক্ত পদার্থ। এভাবে নতুন ধরনের যে টুথক্রিম তৈরি হলো, সেটাকে বয়ামের ভিতরে রাখা হলো। নিউ ইয়র্ক ভিত্তিক কোম্পানি “কোলগেট” ১৮৭৩ সালে বয়ামের ভিতর সুগন্ধি টুথক্রিম ভরে সেটা বাজারজাত করতে শুরু করলো।

হুঁ কলগেটে আজ আমাদের রোজকার জীবনের সাথে জড়িয়ে গেছে। কলগেট দিয়ে দাঁত মাজেই দিন শুরু করি অনেকই আমরা আজো ।কলগেট জিনিসটা আগে কিন্তু মাজন ছিল না, ছিল একটি সাবানের ব্রেন্ড। তবে কলগেট সাবন কিংবা মাজন কোন দ্রব্য নাম নয়।এটি একটা লোকের পদবি ছিল কলগেট। রবার্ট কলগেট ( ১৭৫৮ – ১৮২৬)ইংল‍্যাণ্ডের লোক ছিলেন।সারা বাউলস ছিলেন তাঁর বৌ । যদিও রবার্ট সাহেব প্রথমে ছিলেন কৃষিজীবী মানুষ। তিনি কিন্তু রাজনীতি সচেতন মানুষ ছিলেন। তিনি ফরাসি বিপ্লবের তাঁকে প্রভাবিত করে ছিলো আর আমেরিকার স্বাধীনতা যুদ্ধের সমর্থক। এই অপরাধের দরুণ ইংল্যান্ডের বুকে তাঁর থাকা হলো না।
তখন নিরুপায় হয়ে রবার্ট সাহেব বৌ বাচ্চা সমেত পাড়ি দিলেন আমেরিকায়। সেখানে মেরিল্যান্ড প্রদেশের বাল্টিমোরে বাসাবাস শুরু করলেন। সেটা ১৭৯৮ এর মার্চ মাস।এখানে তিনি একজন লোকের সঙ্গে পার্টনারশিপে সাবান আর মোমবাতি তৈরির কারখানা শুরু করলেন। পরে চলে তিনি গেলেন নিউ ইয়র্কের ডেলাওয়ার কাউন্টিতে। তবে পার্টনারশিপ কারবার দু বছরের স্থায়ী হয়েছিল। তারপর তাঁর ছেলে উইলিয়াম কলগেট একটা সাবান তৈরির কারখানায় শিক্ষা নবিশিতে হলেন । সেটা ১৮০৪।আর উইলিয়াম কলগেট (২৫ জানুয়ারি, ১৭৮৩ – ২৫ মার্চ, ১৮৫৭) গোড়াপত্তন করলেন কলগেট পামোলিভ কোম্পানির। ১৯৫০ এর দিকে কপিরাইটার অ্যালিসিয়া টোবিন বিজ্ঞাপন করেছিলেন It Cleans Your Breath While It Cleans Your Teeth”। আর ক্রমেই দাঁতের মাজন হিসেবে বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল এই কলগেট। অতি সাধারণ মানুষের কাছে কলগেট হয়ে উঠলো দাঁতের মাজনের প্রতিশব্দ।
কলগেট টুথপেস্ট ১৮৭৩ সাল থেকে কাচের জারে বিক্রি হয়েছিল। ক্যালোডন্ট, জনসন অ্যান্ড জনসন এবং শেফিল্ডের নেতৃত্বে টিউব ১৮৯৬ সালে চালু হয়েছিল।

এটি ১৯২০ এর দশক থেকে মালয়েশিয়ায় রয়েছে। এরপর এটি নেপাল এবং ভারতে আসে, উৎপাদন ইউনিট ভারতে স্থাপন করে এবং নেপালে রফতানি করে।
এখন কলগেট পামোলিভ একটা বিশ্ববিখ্যাত প্রতিষ্ঠান। ২০২৩ এ জানা গিয়েছে চৌত্রিশ হাজার কর্মচারী এই সংস্থায় বেতনভুক হিসেবে কাজ করে। এই কোম্পানির নেট আয় ২.৩০ বিলিয়ন ডলার, আর এদের সম্পত্তির মোট অর্থমূল‍্য হল ১৬.৪ বিলিয়ন ডলার। কলগেট পামোলিভ কোম্পানির হেড কোয়ার্টারের ঠিকানা হল ৩০০, পার্ক অ্যাভিনিউ, মিডল টাউন, ম‍্যানহাটান, নিউ ইয়র্ক, ১০০২২, আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র।
আজ থেকে ২১৮ বছর আগে ১৮০৬ খ্রিস্টাব্দে উইলিয়াম কলগেট সাবান আর বাতি তৈরির ব‍্যবসা ফাঁদেন। তার চৌদ্দ বছর পর তিনি সাবান তৈরির কারখানা খুললেন। গোড়ায় অবশ‍্য তিনি একটা সাবান তৈরির কারখানায় বয়লার ঘরে শিক্ষা নবিশ হিসাবে কাজ শিখেছিলেন। আজ থেকে ১৫১ বছর আগে ১৮৭৩ এ উইলিয়াম কলগেট মারা যাবার অনেকদিন পর কাচের জারে করে সুগন্ধি টুথপেস্ট বিক্রি শুরু করে কলগেট। ১৮৯৬ তে সেই টুথপেস্ট টিউবে ভরে বিক্রি করা শুরু হল।
গোড়ায় পামোলিভ বলে কিছু ছিল না। ১৮৯৮ তে পাম তেল আর অলিভ তেল থেকে সাবান তৈরির ফরমূলা তৈরি করলেন বারডেট জে জনসন। তিনি উইসকনসিন প্রদেশের মিলাওয়াকিতে পামোলিভ নামে কারবার ফা়ঁদলেন। ১৯২৮ এর পহেলা জুলাই কলগেট আর পামোলিভ আর পীট একজোট হল। আর ১৯৫৩ তে কারবারের নাম হল কলগেট পামোলিভ।
ভারতে তার প্রথম কারখানা স্থাপনের 7 বছর পর, 1999 সালে কোলগেট বিশ্বের এক নম্বর বিক্রির ব্র্যান্ড হয়ে ওঠে।

Verified by MonsterInsights