কলমে মানব মন্ডল
গতকাল আমি আপনাদের কাছে আঠেরো হাত যুক্ত পূজিত মায়ের কথা তুলে ধরেছিলাম। আজ বলবো তিন হাত যুক্ত ত্রিভুজা দূর্গা মায়ের কথা।
হুগলি জেলার বলাগড় ব্লকের , সোমড়া বাজারের সেন পরিবারে দূর্গা পূজায় ত্রিভুজা রূপে দেবী পূজিত হন।
রামচন্দ্র সেন ছিলেন মুর্শিদাবাদের নবাবের দেওয়ান।কৃষ্ণনগরের বৈদ্যবংশ তাঁর জন্ম। বাবা ছিলেন কৃষ্ণরাম। কৃষ্ণরাম ছিলেন রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের মন্ত্রী।তাকে বন্দি বানান কৃষ্ণচন্দ্র ।রামচন্দ্র রাজনৈতিক কারণেই তাই কৃষ্ণনগর ত্যাগকে করতে হয় তাদের । আর সেই অস্থির সময়ে রামচন্দ্র ভাগ্যান্বেষণে বেরিয়ে পড়েন । তিনি দিল্লির দরবারে পৌঁছন । সেখানে নিজের পাণ্ডিত্য ও বুদ্ধিবলে তৎকালীন মোগল সম্রাটের নজর কেড়ে নেন। ১৭৪৩ সালে তিনি রায় রায়ান উপাধিও পান। আবার তিনি ওয়ারেন হেস্টিংসের নির্দেশে বাংলা, বিহার এবং ওড়িশার দেওয়ানও নিযুক্ত হন । সেই সময় থেকেই তিনি হুগলি বলাগড়ের সোমড়াবাজারে পাকাপাকি ভাবে বসবাস করতে শুরু করেন।
এবং দিল্লির সম্রাট শাহের আমলে রায় রায়ন উপাধি পান রাজা রামচন্দ্র সেন । সেই সুত্রেই সোমড়ায় ২২ বিঘা জমির উপর বাড়ি এবং মন্দির স্থাপন করেন।
রামচন্দ্র সেনের হাতে তৈরি সোমড়ার পাঁচ খিলানের দুর্গাদালান ।
কথিত আছে দালান তৈরির পর কী রূপে মহামায়ার আরাধনা করবেন ভাবতে ভাবতে ধ্যানে বসলেন রামচন্দ্র। মা তাঁকে এই বিচিত্র রূপ দেখান। সাতটি হাত পিছনে লুকিয়ে রেখে ত্রিভুজা রূপে আবির্ভূতা হন। ডান দিকে দু’টি হাত, উপরের হাতে খাঁড়া, নীচেরটিতে ত্রিশূল। বাঁ হাতে সাপের লেজ ধরে আছেন। সেই থেকে রামচন্দ্র ত্রিভুজা দুর্গার পুজো শুরু করেন ।সেন পরিবারের এই পূজা ১৭০০ সনে থেকে। সেন পরিবারের পারিবারিক ইতিহাস ‘চাঁদরানী’ গ্রন্থে রামচন্দ্রের ত্রিভুজা দুর্গার কথা পাওয়া যায়।
এর শাস্ত্রীয় ব্যাখ্যাও আছে। বলা হয় মানুষের রজ, তম, গুণের জন্যই মায়ের তিন হাত। তবে কারো কারো মতে সুষমা, ইরা, পিঙ্গলা নাড়ির জন্যই মায়ের এই ত্রিভুজা রূপ। এদিকে মূল শাস্ত্র মতে মা দুর্গার দশভূজা রূপ বর্ণনা করা আছে। সেই কারণে মা দুর্গার পিছনে ডানদিকে রয়েছে ছোট চার হাত বাঁদিকে তিন হাত, । সেটি কাপড় এবং চুলে আবৃত। মায়ের বাঁ দিকের দুটি হাতে এক হাতে খড়গ ও এক হাতে ত্রিশূল। ডানদিকের এক হাতে সর্প ও মহিষাসুরের কেশ ধরে রয়েছেন। এক চালার মধ্যেই অধিষ্ঠান করছেন লক্ষ্মী, গণেশ, কার্তিক ও সরস্বতী।
এ বাড়িতে বৈষ্ণবমতে পুজো হয়। বিসর্জনে প্রতিমা বাঁশের মাচায় করে মাঝগঙ্গায় নামিয়ে দেওয়া হয়।