লোককথা অনুযায়ী , এক সময়ে পুরুলিয়ার শহরের চিরাবাড়ি এলাকায় তেমন জনবসতি ছিল না। এলাকা জুড়ে ছিল বিঘে বিঘে চাষের জমি । সেখানে ধান পাকলে ডাকাত দল হানা দিত । ডাকাত দলের হাতে লুঠ হত খেতের সোনালি ধান। রাতে ভিতে গ্রামে হানা দিত ডাকাতএর দল। এমনকী বাসিন্দাদের বাড়িতে লুঠপাট চালাত ডাকাতরা। বার বার ক্ষতির মুখে পড়ায় সম্বল বাঁচাতে এলাকার একটি অশ্বত্থ গাছের নীচে শ্যামাকালীর পুজো শুরু করেন এলাকাবাসী।তখন চাষিদের মেহনতের ফসল আগলে রেখেছিলেন স্বরং দেবী কালী। তাই তিনি ডাকাতদের রোষের মুখে পড়েছিলেন। ছিন্নভিন্ন করে দেওয়া হয়েছিল তাঁর মূর্তিকে । কাটা গিয়েছিল তাঁর নাক। সেই থেকে পুরুলিয়া শহরের চিরাবাড়ি এলাকার দেবী কালীকে নাক কাটা কালী বলেই ডাকেন সকল ভক্তরা। আসলে দেবী নিজে উপস্থিত ছিলেন এমনটি নয়। শোনা যায়। গ্রাম বাসি শ্যামাকালীর পুজো করার পরে থেকে ঘটে এক নতুন ঘটনা।ডাকাত দল গ্রামে লুটপাঠ চালাতে এলেই নূপুরে আওয়াজ পাওয়া যেত। নূপুরের শব্দে সজাগ হয়ে যেতেন গ্রামবাসীরা। এলাকা বাসিন্দারা রুখে দাঁড়াতেই পালাত ডাকাতদলও। এরপরেই ডাকাতদল শ্যামাকালীর মূর্তির উপর আঘাত হানে । রাগে তারা মূর্তি ভাঙার চেষ্টা করে। তখনই তারা দেবীমূর্তির নাক কেটে দেয় । এই ঘটনার পরেই এক এক করে ডাকাতদলের সদস্যরাও অঘটনের শিকার হতে থাকেন। কারও মৃত্যু হয়, কারও পরিবারের অভাব দেখা দেয়। সেই থেকে দেবীর ছিন্নভিন্ন মূর্তিকে পুজো করতে থাকেন গ্রামের মানুষ। এখনও গ্রামের মন্দিরের চাতালে ছড়িয়ে রয়েছে দেবীর কাটা হাত, পা, জিভ, নাক। গ্রামের মানুষ কাছে এই অবস্থাতেই আজও পূজিতা হয়ে আসছেন দেবী। এলাকার মানুষের বিশ্বাস দেবী খুব জাগ্রত বলে । কালীপুজোর চারদিন দেবীর পুজো ঘিরে উৎসবে মাতেন এলাকার মানুষ। এই সময়ে মানত করা হয়। ভক্তদের ইচ্ছে পূরণ হয় মায়ের দয়ায়। রাতে পুজো দেখতে বহু মানুষের ভিড় জমে পুরুলিয়ার নাক কাটা কালী মন্দিরে।২০০ বছর ধরে পুজো পাচ্ছেন নাক কাটা কালী