প্রবেশ অবাধ নয়

schedule
2024-03-04 | 09:00h
update
2024-03-04 | 13:05h
person
kolkatarsomoy.com
domain
kolkatarsomoy.com

নীল সোম

,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

গর্ভবতী হয়েও খবর টা কানে আসতেই সরাসরি অনির্বানের বাড়ী গেল নীলা।আবেগে রক্তিম হয়ে বলেই ফেললো, আর কবে মুখ ফুটে উঠবে তোর।
অনির্বাণ:একটা তুচ্ছ ঘটনা কি জানাই বলতো তোকে?
নীলা:কিন্তু এত বছর পরেও তুই আমার কাছে তুচ্ছ হতে পারলি কৈ!
ওষুধটা কিনে নিস বলে হাজার টাকা অনির্বাণের পকেটে ভরে দিলো সে।
অনির্বাণ:লাগবে না রে এখন, দরকার হলে চেয়ে নেবো।
নীলা:সেই, আমিই তো চেয়েই রইলাম, তোর তো চাওয়া হলো না। জানি আজ তুই বড়ো লেখক, তবু আমার অধিকার আছে তোর ওপর এটাও জেনে রাখিস।
জানিস অনি, আজও তোর লেখায় আমি অমৃত পাই, রাতে যেন তুই আমার ঘুম না পারিয়ে ঘুম ভাঙ্গাস, আমি কিন্তু তোর সাথে থাকতেই চাইতাম।
অনির্বাণ:কারণটা তুইও জানিস, নিজের না আছে আমার ঠিকানা, তোকে কি দেব হদিস আস্তানার। এই জীবনটা তোকে না হয় খুঁজি, সামনের টায় পাওয়ার ব্যাধিতে মত্ত হওয়া যাবে। আর দেরি করিস না, অনেকটা যেতে হবে তোর, বেরিয়ে যা।
বেরোনো হলো নীলার কিন্তু পৌঁছনোর ঠিকানা হলো হাসপাতালে।
দেখা গেলো বড়বাজার থানার ওসি অনিকেত হাজরা কে জবানবন্দি দিতে।সামনে তিনজন, ষোলো বছরের আফতাব আনসারী, সত্তর বছরের অর্জুন সিংহ, পঁয়ত্রিশ বছরের রাসেল গোমস।
দশ বছরের চাকরি জীবনে সততার জন্য ট্রান্সফার পাওয়া পুরস্কার প্রাপ্ত অফিসার দুঘন্টায় কেস রফা করতে উদ্যত, শুধু সাক্ষের প্রয়োজন।
অনিকেত:আপনি ভয় পাবেন না, just আমায় বলুন এরাই কি আপনাকে ছুঁয়েছিল?
বিবিধ অঙ্গ প্রত্যঙ্গ তখন যন্ত্রণার ষড়যন্ত্রে রক্তিম, প্রবাহিত হচ্ছে যোনিদ্বার উৎসব ছাড়াই, তবু এর মধ্যেও নীলা মাথা ঘুরিয়ে হাসলো আর বললো কিন্তু শব্দ এতটাই অস্ফুট যে তা শোনা গেলো না।
আর শোনা যাবেও না,নীলা মুহূর্তেই চোখ খুলেই চিরতরে ঘুমিয়ে পড়লো। প্রমান ও সাক্ষর অভাবে ম্লান হয়ে রইল অনিকেত বাবুর প্রচেষ্টা।
সেদিন শাশুড়ী বলেছিলো, পোয়াতি অবস্থায় বেরোলে নাকি শয়তানের কবলে পরার নাকি আশঙ্কা থাকে কিন্তু তার গোত্র যে Homo Sapien হবে সেই বিশ্বাস তাঁর ছিল না।
নীলা কে ফিরে আসতেই হতো, তার সাত মাসের সন্তানের হিসেব টা যে নেয়া বাঁকি ছিলো।
রাত্রে বাথরুম করতে গিয়ে বেসিনের কাঁচ থেকে নীলার লাস্যময়ী হাসি দেখে জমে যায় বুড়ো অর্জুন, বাথরুমেই দাঁড়িয়ে স্ট্রোক, মেঝেতে পড়ার আগেই মৃত্যু। রাত সাড়ে বারোটায়, দক্ষ ড্রাইভার আনসারীর গাড়ি কি ভাবে ব্রিজ থেকে পড়ে যায় কেউ বুঝতে পারেনা।
রাতে ডাইনিং টেবিলে বসে ড্রিঙ্কস করছে রাসেল, নেশা এখনো সে বেশী করেনি, ইতিমধ্যে সে খেয়াল করছে পাত্রে মদ ঢালতেই তা নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে মুহূর্তে।সে ভাবছে এও কি সম্ভব!
চাপা হাঁসির প্রচ্ছনে এক নারী কণ্ঠ বলে উঠলো
সবই সম্ভব!!!
হঠাৎ কে যেন পেছন থেকে রাসেলের গলাটা চেপে শ্বাসরোধ করতে উদ্যত হলো,নিমেষেই মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে সে, ক্ষীণস্বরে আ: আ: করছে সে,
হঠাৎ তার চোখে নীলাকে দেখতেই মনে পড়লো তার কৃতকর্মের কথা,প্রাণ ভিক্ষা করার জন্য আকুতি তার দেহের ভাষায়…নীলা সেদিন তার জীবনটা শেষ করে দিতে পারতো,কিন্তু বেডরুমে তার ছোট্ট মেয়েটার কথা মনে পড়তেই সে শুধু তার তর্জনী দেখিয়ে ক্ষান্ত হলো…সেই তর্জনী যেন বলে গেলো:

প্রবেশ অবাধ নয়

বুকের ওপর মাংস পিন্ড
আর কিচ্ছু নয়
অন্তসত্তায় দুধের যোগান
ঠোঁটের স্পর্শে প্রাণটি বাঁচান
শিশু না হলে আজ্ঞা নিতে হয়
এখানে প্রবেশ অবাধ নয় …

জন্মক্ষেত্র স্বাধীনচেতা
কব্জির জোর মলিনতা
কলিজা থাকলে থাকতো গোলাপ
লজ্জা ঘেন্নায় রাখছো আলাপ
বিবেকটাকে বৃহন্নলা
সত্যি করতে কি হয়
বিশ্বাস করো মতের বিনা
এখানে প্রবেশ অবাধ নয়…

উৎসব হোক না বারোয়ারি
মত নেয়া হোক সবারই
এতোই পিছল পিটুইটারি
মনেই হলো না দরকারি
দেবী শুধু মাটির তৈরি
রক্তে মাংসে নয়
রিক্ত তুমি জেনে রেখো
এখানে প্রবেশ অবাধ নয়…

কিন্তু না চলে গেলে তো হবে না, একটা উত্তর তাঁর এখনো দেয়া বাকি। অনিকেত বাবু ব্যাচেলর মানুষ, কিছুক্ষন আগে ডিনার সেরে ব্যালকনি তে বসে ধূমপান করছে, হঠাৎ তার কানে আসলো পায়ের নূপুরের আওয়াজ।
সেই রকম কোনো আমল দেন নি উনি, এরপর আসলো একটা হাঁসির আওয়াজ নারীর। খুব অবাক হয়ে দৃঢ় কণ্ঠে বললেন, কে কে???
ঘরের ভেতর থেকে আসলো আওয়াজ, আমি অনিকেত বাবু।
এবার কিন্তু অনিকেত বাবু বেশ ভয় পেয়েছেন, কারণ গেটে এবং দরজা দুটোই বন্ধ এত রাতে, তাহলে কি ভাবে সম্ভব কারুর আগমন এবং কাউকেই দেখা যাচ্ছে না।
নীলা:ভয় পাবেন না দাদা, আমি আপনার কোনো ক্ষতি করতে আসিনি কিন্তু কিছু বলতে আসা। মনে পড়ছে আপনার আমাকে?
নাম না মনে পড়লেও উনি বুঝতে পারছেন যে কে এসেছেন।তারপর বললেন কিন্তু আমি আপনাকে দেখতে পারছিনা কেন?
নীলা:আপনি আমায় হাসালেন অনিকেত বাবু যে মানুষটি নাস্তিক সে এখন আমার অস্তিত্বর খোঁজ করছে। কথায় আসি, সেদিন ওরা কেউ আমায় ছুঁতে পারেনি,কেন জানেন কারণ ওরা নারীকে ছুঁতে জানেনা।
কিছু মেদ মাংসে শরীরের উষ্ণতা ওরা উপভোগ করেছিলো, ছুঁতে পারলো কৈ, সব্বাই তা পারেনা অনিকেত বাবু, আকাশে চাঁদ উঠলেই কি সকলের স্পর্শ লাগে জ্যোৎস্নার, লাগে না।
কি জানেন অনিকেত বাবু খুব অবাক লাগে, যে বিধাতা ধরণী গঠন করলো তাঁদের নামে মানুষ ভাগ হয়ে যায় আর যেই সে জননী বানালো তার বিছানায় সব ধর্ম এক হয়ে গেলো, কি কিউট না!!!

অনিকেত বাবু রীতিমত হতবাক তবু সাহস করে জিগ্যেস করলেন, আচ্চা আপনার নাম টা একটু বলবেন আমি ঠিক মনে করতে পারছি না।

নীলা:কি হবে মনে রেখে নাম তবে এইটুকু বলতে পারি যদি কখনো আমায় খুঁজতে চান, অনির্বাণ বাবুর লেখনী তে আমায় পাবেন, সব পুরুষ ধর্ষক হয় না,কেউ কেউ বহু দূরে থেকেও ছুঁতে জানে…ছুঁতে জানে, এই বলতে বলতে বাতাসে যেন মিলিয়ে গেল কন্ঠস্বর…

Advertisement

Imprint
Responsible for the content:
kolkatarsomoy.com
Privacy & Terms of Use:
kolkatarsomoy.com
Mobile website via:
WordPress AMP Plugin
Last AMPHTML update:
20.11.2024 - 19:57:42
Privacy-Data & cookie usage: