বাংলাদেশের গার্মেন্টস সেক্টরের নারী কর্মীদের মাসিককালীন স্বাস্থ্যসুরক্ষা নিশ্চিতে মামুনুর রহমান নামের এক ব্যক্তির হাত ধরে ২০১৮ সালে পরিবেশবান্ধব ‘এলা প্যাড’-এর যাত্রা শুরু হয়। বাজারের সিন্থেটিক স্যানিটারি ন্যাপকিনগুলো ব্যবহারের ফলে অ্যালার্জি, ইনফেকশন, র্যাশ ওঠা, চুলকানি এমনকি ক্যান্সার পর্যন্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। কিন্তু, ঝুট কাপড় দিয়ে তৈরি ‘এলা প্যাড’ ব্যবহারে এমন কোনো ঝুঁকি নেই। স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে অব্যবহৃত ঝুট কাপড়গুলো গার্মেন্টস ফ্যাক্টরির কাটিং সেকশন থেকেই সংগ্রহ করা হয়। তৈরির পর আরো দুই ধাপে বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হয়ে এগুলো ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়।
স্যানিটারি ন্যাপকিনগুলো বায়োডিগ্রেডেবল হওয়ায় এগুলো ৬ মাসের মধ্যে মাটির সাথে মিশে যায়। প্রতিটি প্যাড তৈরির ফলে প্রায় ৩০০ লিটার পানি এবং ০.১ কেজি কার্বন-ডাই-অক্সাইড সংরক্ষিত হয়। ফলে পরিবেশ দূষণের কোনো সম্ভাবনা নেই। সব বয়সী নারীদের ব্যবহারের জন্য বিভিন্ন সাইজে ও শেইপে প্যাডগুলো তৈরি করা হয়। প্যাডগুলো একই সাথে পুনরায় ব্যবহারযোগ্য এবং সাশ্রয়ী। ভারী এবং হালকা ফ্লোয়ের জন্য উপযোগী হওয়ায় নারীরা নিশ্চিন্তে এটি করতে পারবেন।
২০১৩ সালে ইউএনএফপিএ কর্তৃক বাংলাদেশের ১৫টি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরির নারী কর্মীদের উপর একটি জরিপ করা হয়েছিল। মামুনুর রহমান এই প্রজেক্টে কাজ করেছিলেন। জরিপে দেখা যায় যে, প্রতিমাসে মাসিকের সময় নারী শ্রমিকরা গড়ে প্রায় ৩-৪ দিন ধরে অনুপস্থিত থাকতেন। অসুস্থতাজনিত কারণে ছুটি নেওয়ার জন্য তাদেরকে এই কয়েকদিনের পারিশ্রমিক প্রদান করা হতো না। কারখানাগুলোতে নারীদের জন্য পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন টয়লেটের কোনো ব্যবস্থা ছিল না। এছাড়াও পর্যাপ্ত সচেতনতার অভাব এবং স্যানিটারি ন্যাপকিনের অতিরিক্ত দামের কারণে নারীরা মাসিকের সময় অস্বাস্থ্যকর কাপড় ব্যবহার করার কারণে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে ভুগতেন। এই সমস্যার সমাধানে মামুনুর রহমান ‘এলা প্যাড’ তৈরির সিদ্ধান্ত নেন।
নারীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিতে, তাদের স্বাবলম্বী করে তুলতে, সচেতনতা বৃদ্ধিতে এবং সামাজিক ট্যাবু ভাঙতে ‘এলা প্যাড’ কাজ করছে। কোনো বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে এই কার্যক্রম পরিচালিত হয় না। ‘এলা প্যাড’ মূলত গার্মেন্টস সেক্টরের নারীরা তৈরি করে নিজেরাই ব্যবহার করে থাকেন। পুরুষ কর্মীরাও তাদের সাথে কাজ করেন। অনেক সময় পুরুষদের পরিবারের নারী সদস্যদের জন্যও বিনামূল্যে প্যাডগুলো সরবরাহ করা হয়। ‘এলা প্যাড’-এর মাধ্যমে জাতিসংঘ কর্তৃক প্রণীত সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোলজ (এসডিজি)-এর ১৭টি অভীষ্টের মধ্যে প্রায় ১১টি অভীষ্ট পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে।