ড.রাধাবিনোদিনী বিন্তি বণিক (পর্ব-৩, পূর্ব প্রকাশের পর)(ফটোয়–বৃন্দাবনের শ্রীগোবিন্দ বিগ্রহ, বর্তমানে জয়পুরে অবস্থান)
……….মহেশ মনে মনে ভাবছে, “ওহ্ আচ্ছা , এই বুঝি তবে বৃন্দাবনচন্দ্র শ্রীকৃষ্ণ!” বিহ্বল হয়ে দেখতে দেখতে , ভাবতে ভাবতে যখন তার সম্বিৎ ফিরলো ,ততক্ষণে গরুর পাল নিয়ে সেই কিশোর দৃষ্টিপথের বাইরে চলে গিয়েছে। মহেশ ভাবলো, যাক শ্রীকৃষ্ণের দেখা পেলাম তবে ! আসাটা সার্থক হল। এবার রাধাঠাকুরাণীকে দেখতে হবে তো! তাঁর দেখা তো আজ হল না, যদি কাল পাই!
মহেশ ফিরে এল গোস্বামী প্রভুর কাছে। বেশ উৎফুল্ল মন তার। গোস্বামী প্রভু ভাবলেন, যাক ঘরের ছেলে ঘরে এসেছে। তিনি তখন কিছু বললেন না, রাত্রে শয়নে যাবার আগে জিজ্ঞাসা করলেন, "হ্যাঁ-রে মহেশ, তুই সারাদিন কী করলি, শুনি ?" মহেশ বললো, "কেন, সারাদিন অপেক্ষা করলাম! তারপর সন্ধ্যা নামতে গোষ্ঠ ফেরৎ গোবিন্দকে দেখলাম। আহা , নয়ন আমার ধন্য হয়ে গেল ,প্রভু। তিনি যে কী সুন্দর কী বলবো! সর্বক্ষণ তাঁর মুখটাই মনে ভাসছে আমার।" গোস্বামী প্রভু মুখ লুকিয়ে একটু মৃদু হাসলেন, কিন্তু, কিছু বললেন না। কী দেখতে কী দেখেছে মহেশ, শ্রীকৃষ্ণ ভেবে নিয়েছে ব্রজের কোনো বালককে !
পরদিন সকাল হতেই প্রাতঃকৃত্য-স্নানাদি সেরে মহেশ বললো, "যাই প্রভু, কৃষ্ণ দর্শন করে আসি। এখন তো কৃষ্ণ গোষ্ঠে যাবেন। তাঁর যাবার পথে দাঁড়িয়ে থেকে টুক করে দেখে নেব । একবার দেখে কী আর সাধ মেটে! মনে হয় ভগবান অনেক-অনেক নয়ন দিক , আর সব নয়ন দিয়ে তাঁর রূপমাধুরী আস্বাদ করি।কাল তাঁকে দেখার পর থেকেই আমার নয়নের তৃষ্ণা যেন হাজার গুণ বেড়ে গেছে আরও।" গোস্বামী প্রভু বললেন ,"আরে, শ্রীকৃষ্ণ কী সক্কাল হলেই গোষ্ঠে যান নাকি! এখন তো রাধারাণী আসবেন নন্দীশ্বরে। শ্রীকৃষ্ণের জন্য রন্ধন করবেন। সেসব ভোজন করে তারপর শ্রীকৃষ্ণ গোষ্ঠে যাবেন। তা প্রায় সাড়ে নটা হবে। তারপর আবার এগারোটার পর রাধাকুন্ডে শ্রীরাধা ও শ্রীকৃষ্ণের দেখা হবে। সেখানে তাঁদের কত রকম লীলা-- হিন্দোলা, জলকেলি, পাশাখেলা, ভোজন, শয়ন । শ্রীকৃষ্ণের গোষ্ঠ থেকে ফিরতে সেই সন্ধ্যা। তুই বরং বিকেলে যাস।" মহেশ কৌতুহলী চোখে বলে উঠলো, "তাই নাকি ! এত সব কিছু হয়! তবে তো আজ রাধা ঠাকুরাণীরও দর্শন পাব। বাহ্, খুব ভালো ব্যাপার।" সে ধৈর্য্য ধরতে না পেরে তখনি বেড়িয়ে গেল কোন আহার না করে উপবাসী পেটেই। শ্রীরাধাকৃষ্ণকে দর্শনের আকাঙ্খা তার এত তীব্র ছিল যে, নিজের ক্ষিদে-তেষ্টা ,দেহবোধ পর্যন্ত হারিয়েছিল । গোস্বামী প্রভুর মায়া হল সরল মহেশের দশা দেখে।
সন্ধ্যার পরে বেশ রাত করে মহেশ ফিরলো। এভাবে সে প্রতিদিনই বেড়িয়ে যায় , আর রাত করে ফিরে স্বল্পমাত্রায় কিছু প্রসাদ পেয়ে মহানন্দে ঘুমিয়ে পড়ে । গোস্বামী প্রভু তাকে কিছু বলেন না। মহেশকে নিজের মর্জি মতই থাকতে দিয়েছেন। তিনিও তো ভজনশীল ভক্ত-মহাত্মা, ভালো মানুষ । বৃন্দাবনে নিত্য নিজের ভজন-সাধন নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। দিন কাটতে্