রাজনৈতিক কারনে আজ একটা প্রশ্ন বারবার ঘুরেফিরে আসছে বাঙালির কাছে রাম কি বাংলার বহিরাগত দেবতা??
উত্তর খুঁজতে তাহলে আমাদের যেতে হবে হাওড়া রেলস্টেশন । হাওড়া-ব্যাণ্ডেল রেলপথে শ্রীরামপুর রেলস্টেশন পরে সে টা সকলেই জানেন। হাওড়া থেকে শ্রীরামপুর রেলপথে দূরত্ব ২০ কিমি। গ্রান্ট ট্রাঙ্ক রোড শ্রীরামপুর শহরের উপর দিয়ে চলে গেছে। এখানে শেওড়াফুলির রাজা রাজচন্দ্র রায় ১৭৫৩ খ্রীষ্টাব্দে এখানে রামসীতার মন্দির নির্মাণ করেন। লোক কথা অনুযায়ী এই শ্রীরামচন্দ্র জিউ থেকে শ্রীরামপুর নামটি উদ্ভব হয়েছে।
শ্রী ফ্রেডরিক নগর নাম ছিলো এক সময় আজকের শ্রীরামপুর । একসময় কোলকাতা যখন ছিল ইংরেজদের অধীনে ছিলো তখন শ্রীরামপুর অঞ্চল ছিল দিনেমারদের দখলে । দিনেমাররা ১৭৫৭ সালে শেওড়াফুলি রাজা রাজচন্দ্র রায়ের কাছ থেকে আকনা, গোপীনাথপুর, শ্রীপুর, মোহনপুর ও পেয়ারাপুর পাঁচটি গ্রামের ইজারা নেয়। ইজারা নিয়ে ডেনমার্কের তদানীন্তন রাজা পঞ্চম ফ্রেডরিকের নাম অনুসারে এই জায়গার নামকরণ করেন ফ্রেডরিক নগর। পরে ১৮৪৫ সালে এই শহর আবার দিনেমারদের থেকে ইংরেজদের দখলে আসে।
পুরাতন শহর শ্রীরামপুরের বেশীরভাগ পথ এমনিতেই সংকীর্ণ, রাম সীতা লেনের গলি আরো খানিকটা সংকীর্ণ।দুপাশে পুরনো দিনের বাড়ী, মাঝে খানিকটা বাগান সহ ত্রিখিলান যুক্ত বাংলারীতির এই রাম সীতা মন্দির অবস্থান করছে । যদিও 271 বছরের বেশি পুরনো জরাজীর্ণ ও অবহেলিত হুগলির শ্রীরামপুরের রাম মন্দির সংস্কার ও হেরিটেজের দাবি উঠেছে এখন৷ পরিস্থিতি এমনই যে, মন্দিরের পলেস্তেরা খসে বেরিয়ে এসেছে চুন-সুড়কির ঢালাই ৷ বর্তমানে শেওড়াফুলি রাজ পরিবারের উদ্যোগে এই মন্দিরকে পুনর্নির্মাণ ও হেরিটেজের স্বীকৃতির আবেদন করা হয়েছে ৷
লোককথা অনুযায়ী, একদিন নৌকা যাত্রার সময় শেওড়াফুলির রাজা রাজচন্দ্র রায় ভগবান শ্রী রামের স্বপ্নাদেশ পান। তারপর তিনি এই মন্দির নির্মাণ করান। মন্দিরের প্রতিষ্ঠা ফলক অনুযায়ী শেওড়াফুলি রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা রাজা মনোহর চন্দ্র রায়ের পুত্র রাজা রাজচন্দ্র রায় ৭ই জ্যৈষ্ঠ, ১১৬০ বঙ্গাব্দে বা ১৭৫৩ খৃষ্টাব্দে শ্রীপুর গ্রামে এই মন্দির নির্মাণ করেছিলেন । তিনি জটি রাজা নামেও পরিচিত ছিলে। তিনি রঘুনাথ ঠাকুর, লক্ষ্মণ ঠাকুর, সীতা দেবী, হনুমান জী ও গোপাল জিউ এর বিগ্রহগুলি প্রতিষ্ঠা করেন।এই রাম সীতা মন্দির নিত্য সেবা নির্বাহের জন্য শ্রীরামচন্দ্রের নামে শ্রীপুর, মোহনপুর ও গোপীনাথপুর এই তিনটি গ্রামের ৩০০বিঘা জমি দেবোত্তর হিসেবে দান করেছিলেন। পরবর্তীকালে এই তিনটি গ্রাম একত্রে শ্রীরামপুর নামে পরিচিত হয়। যদিওআজ সেই দেবোত্তর জমির কিছুই মন্দির কর্তৃপক্ষের হাতে নেই, সবই দখলদারদের দখলে। তাই মন্দিরে অবস্থা খারাপ।
শ্রীরামপুরের অতীত গরিমা কম নয় । শ্রীরামপুরের মাহেশের রথযাত্রা বাংলার প্রাচীনতম এবং পুরীর পরেই ভারতের দ্বিতীয় প্রাচীন রথযাত্রা। শ্রীরামপুর মিশনের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত ভারতের প্রথম কাগজকলও এই শহরে প্রতিষ্ঠিত হয়।বাংলা তথা ভারতের প্রথম পাটকল ওয়েলিংটন জুটমিল ও দ্বিতীয় ইন্ডিয়া জুটমিল এখানে গড়ে ওঠেছিল ।এশিয়ার প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় শ্রীরামপুর বিশ্ববিদ্যালয় এখানে গড়ে উঠেছে। ভারতের দ্বিতীয় প্রাচীন কলেজ শ্রীরামপুর কলেজ ।ভারতের প্রথম গ্রন্থাগার উইলিয়াম কেরি লাইব্রেরি এখানেই স্থাপিত হয়।