শীতলকুচির আবেগ উসকে কোচবিহারের সভা থেকে বিজেপিকে বিঁধলেন তৃণমূল সুপ্রিমো। বিধানসভা ভোটের দিন শীতলকুচিতে লাইনে দাঁড়িয়ে কেন্দ্রীয় বাহিনীর গুলিতে মৃত্যু হয়েছিল ৫ জনের। তৎকালীন এসডিপিও দেবাশিস ধর বর্তমানে বিজেপির লোকসভার প্রার্থী। কোচবিহারে লোকসভা কেন্দ্রের প্রচারে সেই ইস্যুকে হাতিয়ার করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর খোঁচা, “শীতলকুচিতে এত মানুষ মেরে হাতের রক্ত এখনও মোছেনি। এখন বীরভূমে গিয়ে দাঁড়িয়েছে।”
বৃহস্পতিবার মাথাভাঙার সভা থেকে ‘এক ঢিলে দুই পাখি’ মারলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, বলছে রাজনৈতিক মহল। একদিকে যেমন কোচবিহারের মানুষকে মনে করিয়ে দিলেন, শীতলকুচিতে কীভাবে ৫ জনের মৃত্যু হয়েছিল। অন্যদিকে বীরভূমে বিজেপি প্রার্থী তথা প্রাক্তন আইপিএস আধিকারিক দেবাশিস ধরের বিরুদ্ধেও আক্রমণ শানালেন। স্পষ্ট করে দিলেন, কোচবিহারের সেই রক্তক্ষয়ী ঘটনার ‘মূল মাথা’ আইপিএস আধিকারিককে রাজ্য ক্লিনচিট দেয়নি অথচ তাঁকে প্রার্থী করেছে বিজেপি। বিষয়টি নিয়ে এদিন তোপ দাগলেন তৃণমূল সুপ্রিমো। সভা থেকে মমতা বলেন, “ভোটের সময় শীতলকুচিতে লাইনে দাঁড়ানো ৫ জনকে গুলি করে মেরেছিল। ৪ জন সংখ্যালঘু ও ১ জন রাজবংশী ভাই ছিল সেখানে। নির্বাচনের মাঝেই ছুটে এসে পাশে দাঁড়িয়েছিলাম।” এর পর বিজেপিকে বিঁধে বলেন, “যে লোকটার নির্দেশে এটা হয়েছিল তাঁর বিরুদ্ধে আমার সরকারের দুটো ডিপি চলছে। ভিজিল্যান্স ক্লিয়ার হয়নি। আমরা রাজ্য সরকার আপত্তি করা সত্ত্বেও ভারতবর্ষের সরকার তাঁকে ক্লিয়ারেন্স দিয়ে দিয়েছে। কোনও আইনকানুন কিচ্ছু মানেনি। সংবিধান মানেনি।” মমতার খোঁচা, “তিনি আবার বীরভূমে দাঁড়িয়েছেন। শীতলকুচিতে এত মানুষ মেরে, হাতের রক্ত এখনও মোছেনি। এখন বীরভূমে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। আর এখন বলছে আমি তো এসডিপিও ছিলাম। তাতে কী!”
বিজেপি প্রার্থী নিশীথ প্রামাণিকের সঙ্গে তুলনা করে তৃণমূল প্রার্থী জগদীশ বর্মা বসুনিয়াকে হিরের সঙ্গে তুলনা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন মাথাভাঙ্গার গুমানিহাটের সভা থেকে নাম না করে নিশীথকে কার্যত তুলোধোনা করেন মমতা। একই সঙ্গে বলেন, ‘আমাদের প্রার্থীকে দেখুন কোচবিহারের একটা হিরে। কথা কম কাজ বেশি। আর ওদের প্রার্থী, অমাবস্যার কালো ছায়ায় ঢেকে গেছে মুখ গুলো সব।’ জগদীশকে মাটির মানুষ বলেও সার্টিফিকেট দেন মমতা।
উলটো দিকে নাম উচ্চারণ না করলেও নিশীথকে এদিন তীব্র আক্রমণ করেন মমতা, জানান আমরা তাড়িয়ে দিয়েছি। আমাদের আপদ এখন বিজেপির সম্পদ। নিশীথের বিরুদ্ধে হাজার হাজার কেস রয়েছে বলেও জানিয়ে দেন তিনি। সেই মামলার তালিকা তিনি দলের নেতাদের দিয়েও দেবেন। নিশীথের স্বরাস্ট্রমন্ত্রী হওয়ার ঘটনাকে ‘দেশের লজ্জা দেশের কলঙ্ক’ বলেও কটাক্ষ করেন মমতা। কোচবিহার জেলার মাথাভাঙায় প্রথম সভা করলেন তিনি। সেখানেই কেন্দ্রীয় সরকারকে একহাত নিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো। মাথাভাঙার সেই সভা থেকেই নাম না করে বিজেপি প্রার্থী নিশীথ প্রামাণিককে আক্রমণ করলেন তিনি। মমতা বলেন, ‘আপনাদের একজন বাবু যার বিরুদ্ধে হাজার হাজার কেস, আমার দল থেকে তাড়িয়ে দিয়েছি। আমাদের দলে ও ছিল আপদ, আর বিজেপির আজ হয়েছে সম্পদ। শুধু গুন্ডামি কের বেড়ায়। আমি শুনেছি কেন্দ্রীয় সরকারের পুলিশের টুপিও নাকি পরে। আমি ভিডিয়োটা চেয়ে পাঠিয়েছি। ৪-৫ গাড়ি পুলিশ নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। ক’দিন আগে উদয়ন গুহকেও অ্যাটাক করেছিল। উদয়ন গুহর গাড়িতে অ্যাটাক হয়েছিল।’
নিশীথের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হওয়াকেও দেশের লজ্জা বলে কটাক্ষ করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি আরও বলেন, ‘বাবু আমি একটু বলব? তোমার বিরুদ্ধে কী কী কেস আছে? কত কেস আছে? আমি দিয়ে দেব স্থানীয় নেতাদের কাছে। আমার কাথে সব নথিবদ্ধ করা আছে।’
পাশাপাশি তিনি সিটিজেন আমেন্ডমেন্ট অ্যাক্ট নিয়েও কটাক্ষ করেন। তিনি বলেন, “সি এ এ যদি মাছের মাথা হয় তাহলে এনআরসি মাছের লেজ। আপনারা আবেদন করলে বন্ধ হয়ে যেতে পারে সরকারি পরিষেবা। বন্ধ হয়ে যেতে পারে আপনাদের ভোট দেওয়ার অধিকার। বাংলার মাটিতে কোন অবস্থাতেই সিএএ লাগু হতে দেব না।”
প্রচার মঞ্চে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাথে প্রার্থী জগদীশচন্দ্র বর্মা বসুনিয়া সহ উপস্থিত ছিলেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী উদয়ন গুহ, বিদ্যুৎ মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, কোচবিহার জেলা তৃণমূল সভাপতি অভিজিৎ দে ভৌমিক, উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহন সংস্থার চেয়ারম্যান পার্থ প্রতিম রায়, জেলা সভাধিপতি সুনিতা বর্মন, এবং স্থানীয় নেতৃত্বরা।