google-site-verification=r3lYzE3jI5XC8igrXRKdm9HAWALrzmx6coPmyeHNww4
Spread the love

দেবলগড়কে ‘নদিয়া জেলার সুন্দরবন’ বলে অংশকে ডাকা যেতে পারে। কারণ এটা নয়, বছরের অধিকাংশ সময়ে এখানে জল জমে থাকে, আর সেই জলে মধ্যে থেকেই মাথা উঁচিয়ে দাঁড়িয়ে একের পর এক গাছ।আসলে সুন্দরবন একটি প্রত্নতাত্ত্বিক স্হল। দেবলগড় তেমনি একটা প্রত্নতাত্ত্বিক স্থল। একটা জায়গা যার ইতিহাস কথা আজ মানুষের অজানা। জল জমে থাকার এই জঙ্গলে লুকিয়ে এক আকর্ষণীয় ইতিহাস। এই অংশটি একটি গড়ের পরিখা, ফলে স্বাভাবিকভাবেই চারপাশের তুলনায় নিচু ভূমি। গড় ধ্বংসপ্রাপ্ত, পরিখারও স্পষ্ট অবয়ব পাওয়া দুষ্কর, তবু জমে-থাকা জল অতীতকর্তব্য ভোলেনি আজও। সুরক্ষার চেষ্টা করে যথাসাধ্য।কোন গড়? দেবলগড়। কেউ বলেন দেবল রাজার গড়, আধুনিকতম সম্ভাবনা-তত্ত্ব বলে, লক্ষ্মণসেনের রাজধানী হলেও হতে পারে। নদিয়ার গাংনাপুরের দেবগ্রামে, এক জঙ্গলের মধ্যে রয়েছে এই পরিখা ও গড়ের ধ্বংসাবশেষ।বারবার অবহেলিত বাংলা আর বাঙ্গালীর ইতিহাস। যদিও গ্রামের মানুষেরা নিজেরাই উদ্যোগ নিয়ে একটি প্রত্নতাত্ত্বিক সংগ্রহশালা বানিয়ে ফেলেছেন। শ্রী চিত্ত বিশ্বাস তাঁর বাড়ি , দিয়েছেন শ্রী অশেষ হালদার দিয়েছেন আসবাবপত্র, ইলেক্ট্রনিক সরঞ্জাম ইত্যাদি। এঁদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন উজ্জ্বল তরুণ, ডা: বিশ্বজিৎ দাস, সঞ্জয় ভৌমিক, অনির্বাণ বোস, দেবজিৎ বিশ্বাস প্রমুখ। দেবগ্রামবাসীরা উৎসাহ, উদ্দীপনা নিয়ে এই অঞ্চলের থেকে পাওয়া ঐতিহাসিক সম্পদগুলি বাঁচাতে উদ্যোগী হয়ে, “দেবলগর দেবল রাজা পুরাতত্ত্ব ও লোক সংস্কৃতি পরিষদ, নামে এক সংগ্রহশালার তৈরি করেছেন দেবগ্রাম, গাংনাপুর, নদীয়ায়।এখানে পাল যুগের নকশা করা মৃৎপাত্রের অংশ, জল প্রদীপ এবং ধুপদানি পেয়ে যাবেন।তবে মজার বিষয়,পালযুগের আরোএকটি প্রত্নতাত্ত্বিক বস্তুর চাকদহ থানার বনমালিপাড়ায় পাওয়া গেছে প্রস্তর নির্মিত একটি অনিন্দ্য সুন্দর বজ্রযানি তারা মূর্তি । কিন্তু বর্তমানে এটি হিন্দু দেবী হিসেবে পূজিত হচ্ছে। দেবলায় পাওয়া গেছে ক্ষুদ্র ব্রোঞ্জের বুদ্ধ মূর্তিও।নদীয়া জেলার গাংনাপুর থানার দেবগ্রাম পঞ্চায়েতের দেবলগড়কত পুরনো এই প্রত্নক্ষেত্র তা এখান থেকেই বোঝা যায়? এখান থেকেই পাওয়া গিয়েছে গুপ্ত-পূর্ববর্তী যুগের অসংখ্য নমুনা। গুপ্তযুগের অসংখ্য মুদ্রা ও শিলালিপ।পাওয়া গিয়েছে প্রাচীন রোমান পানপাত্র বা অ্যাম্ফোরাও।দেবলগড় অঞ্চলে এখনো একট বড় দুর্গের অবশেষ এখনও দাঁড়িয়ে আছে। চারপাশ ঘিরে চওড়া পরিখা আছে।সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয়, দুর্গের চারটি কোণে আছে ৭০-৮০ ফুট উঁচু চারটি ঢিবি। এগুলো একসময় হয়তো ওয়াচটাওয়ার হিসাবে কাজ করত।ওই নদীর খাতের এই বিরাট উঁচু প্রাচীরের অবশেষ। যা দেখে দুর্গ মনে হওয়া অসম্ভব নয়। কিন্তু নদীর পাড়ে যে কোনও বাণিজ্যকেন্দ্রের সুরক্ষার জন্য উঁচু বাঁধ দেওয়া বা প্রাচীর তৈরি হতো। এইটা হয়তো সেরকম।ভূগোলের বই হিসেবে নদিয়া জেলা ব-দ্বীপ। তাই প্রাকৃতিক ভাবে এমন ঢিপি বা টিলা তো থাকার কথা নয়। টিলা থেকে, মজে যাওয়া নদীখাত থেকে পাওয়া গেছে প্রাচীন আমলের মৃৎপাত্রের টুকরো। এলাকায় গাছের তলায় পুজো হচ্ছে কালো ব্যাসল্ট পাথরের বিষ্ণুমূর্তি। এটি পাল-সেন আমলের ভাস্কর্য। কিন্তু এই জঙ্গলে ঘেরা টিলা এবং সংলগ্ন এলাকার নাম ‘দেবল রাজার গড়’। কিন্তু এই রাজার নাম তো ইতিহাস বইএ।দেবগ্রামকে লক্ষ্মণ সেনের রাজধানী বিজয়পুর হিসেবে গণ্য করার হলে, বখতিয়ার খিলজী বাংলা বিজয় কাহিনীটি মিথ্যা হয়ে যাবে। কাহিনী অনুযায়ী নদিয়া মানে নবদ্বীপেই ছিল লক্ষ্মণ সেনের রাজধানী, । কিন্তু ধোয়ীর ‘পবনদূত’ কাব্যে সেন রাজধানী বলা হয়েছে বিজয়পুরকে। পবনের যাত্রাপথ থেকে বোঝা যায় বিজয়পুর পশ্চিমবঙ্গের ত্রিবেণীর কাছে। নবদ্বীপ আর ত্রিবেণীর মধ্যে দূরত্ব বেশ অনেক খানি। নীহাররঞ্জন রায়ের মতেও ধোয়ী বর্ণিত বিজয়পুর গঙ্গা তীরবর্তী, কিন্তু নবদ্বীপের থেকে আলাদাশ্রীচৈতন্যভাগবত (আদি খণ্ড)-এ বলা হয়েছে, ‘নবদ্বীপ হেন গ্রাম ত্রিভুবনে নাঞি/ যহিঁ অবতীর্ণ হইলা চৈতন্য গোঁসাঞি।’ নবদ্বীপ সেন রাজাদের রাজধানী হলে কি গ্রাম হিসেবে পরিগণিত হত কেন?হিসামুদ্দিন এবং হুসামুদ্দিনের জবানি শুনে মিনহাজ়ের রচিত ‘তবাকৎ-ই-নাসিরি’ লক্ষ্মণ সেনের পলায়নের কাহিনী বর্ণনা দিয়েছেন, তা এখানেই প্রশ্নের মুখে পড়ে। সেন রাজত্বের অধীশ্বর লক্ষ্মণ সেন অসুরক্ষিত অবস্থায় বাণিজ্যকেন্দ্রে থাকবেন এবং হামলা শুনে তড়িঘড়ি পালিয়ে যাবেন কি? যে পথ ধরে বখতিয়ার আসছেন তা থেকে স্পষ্ট, অভিযানের উদ্দেশ্য রাজনৈতিক ক্ষমতা দখল নয়। তার উদ্দেশ্য ছিলো ধনসম্পদ আহরণ। প্রতিপক্ষের সামরিক ঘাঁটি রাজধানীর বদলে সমৃদ্ধ বাণিজ্যকেন্দ্র লুণ্ঠনই তাঁর মূল উদ্দেশ্য ছিলো। বখতিয়ারের হামলার জেরে সেই পলাতক কি মাথরণ্ডিয়ার বণিকসঙ্ঘের অধিপতি নাতো? সম্ভ্রান্ত বণিকের অর্থভান্ডার রাজ-কোষাগারের থেকে যে কম কিছু নয়। আর দেবল রাজা ছিলেন হয়তো এই সম্ভ্রাত বনিক। লক্ষন সেন বোধহয় সেইদিন পলায়ন করেন নি। বাঙালি জাতিকে ভীতু জাতি হিসেবে দেখানোই বহিরাগতদের মূলত উদ্দেশ্য ছিলো এই মিথ কাহিনীটি??

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights