google-site-verification=r3lYzE3jI5XC8igrXRKdm9HAWALrzmx6coPmyeHNww4
Spread the love

উলুবেড়িয়ার নামকরণের কিভাবে হয়েছে জানেন??
এক সময় এই বিস্তীর্ণ অঞ্চল আগে ‘উলু’ ঘাসে ভরা ছিল। সেইখান বোধহয় থেকেই এই জনপদের নাম হয়েছে উলুবেড়িয়া। ।পঞ্চদশ শতকের শুরুতে ইসলাম ধর্মপ্রচারের উদ্দেশ্যে এসে দুই যমজ ভাইবোন আব্বাদুদ্দিন এবং রোশনারা এই নির্জন জায়গাটিকে জনপদ গড়ে তোলার গল্প কিছু সম্প্রদায়ের প্রচার করলেও সেটি সঠিক নয়।
ইতিহাসে বলে কলিকাতা নগর তৈরী আগে ১৬৮৬ সালে জব চার্নক প্রথম হুগলি নদীর তীরে এই উলুবেড়িয়াতে জলপথে বাণিজ্য করার জন্য স্থায়ী বসতি নির্মাণ করেছিলেন।
উলুবেড়িয়া হয়তো আজ কলিকাতার চেয়ে সমৃদ্ধ নগরী হয়ে উঠেতে পারতো কিন্তু বাঁধা হয়ে দাঁড়ান।নবাবের বক্সী আবদুস সামাদ। এই নবাব সাথে জব চার্ণকের একটি বারো দফার চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছি। চুক্তি অনুযায়ী জব চার্নকের উলুবেড়িয়াতে কুঠি নির্মাণ করতে চেয়েছিলেন। নবাব জব চার্নককে কুঠি নির্মাণে অনুমতি দেয় ১৬৮৮ সালের ২৭ আগস্ট । জব চানক ফোর্ট সেন্ট জর্জ নামে একটি কুঠি নির্মাণের পরিকল্পনা করেন। ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানির ধীরে ধীরে সমগ্র জনপদটিকে আস্ত ব্রিটিশ কলোনি হিসেবে গড়ে তোলার ইচ্ছা ছিল । উলুবেড়িয়ায় কুঠি তৈরি শুরু হলে, যে গঙ্গার ধারেই ইংরেজদের কুঠি নির্মিত হলে হিন্দু মেয়েদের সম্ভ্রম ও আব্রু রক্ষা করা দায় হয়ে উঠবে এই অজুহাতে কুঠি নির্মাণ বন্ধ করে দেয়।
নির্দিষ্ট পরিমাণ শুল্ক দিয়ে জব চার্নক বাণিজ্য করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু এতেও নবাব বাধা দেন। মুঘলদের সঙ্গে ব্রিটিশদের বিরোধ দেখা দেয়। আসলে তার অনেক আগেই পর্তুগীজরা মুঘল দরবারে ও হারামে নানা উপহার ও সুন্দরী নারী সরবাহ করে বন্ধু সম্পর্ক গড়ে তুলেছিল। তাই ইংরেজরা কিছু সুবিধা না করতে পেরে উলুবেড়িয়া থেকে বাধ্য হয়ে সুতানুটিতে চলে আসেন । তাছাড়া উলুবেড়িয়া জায়গাটি পলি মাটি পরিপূর্ণ ছিল, তাই দূর্গ নির্মাণের জন্য অনুপযুক্ত ছিল।মুঘলদের অতিরিক্ত করের চাহিদা এবং আক্রমণের ভয়কারণে জব চার্ণক এখান থেকে সরে যায়। অনেকে মনে করেন যে, এখানে অত্যধিক মশার উপদ্রবের কারণে এবং তা থেকে রোগাক্রান্ত হওয়ার ভয়েই জব চার্নক সুতানুটি চলে গিয়েছিলেন।
তবে আজ উলুবেড়ীয়া বাসীর গর্বিত আনন্দময়ী মায়ের জন্য।১৩২৭ বঙ্গাব্দের ১৭ বৈশাখ অর্থাৎ ১৯১৮ সালে উলুবেড়িয়ায় স্থাপিত হয় এই ঐতিহ্যবাহী সুপ্রাচীন আনন্দময়ী কালীমন্দির। তৎকালীন উলুবেড়িয়ার মহকুমা শাসক যতীন্দ্রমোহন বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মুন্সেফ শশীজীবন সেন একত্রে এই মন্দির নির্মাণ করেন হুগলি নদীর পশ্চিম পাড়ে। শরৎচন্দ্র ধারা, নারায়ণচন্দ্র মান্না, অবিনাশ চন্দ্র মুখোপাধ্যায় এবং তাঁর স্ত্রী ব্রতবাণী দেবী এই মন্দির নির্মাণের কাজে আর্থিক সহায়তা করেছিলেন। আন্দুল রাজ পরিবারের জমিদার শৈলেন্দ্রনাথ মিত্র মন্দির তৈরির জন্য এক বিঘা জমি দান করেছিলেন । মেদিনীপুরের রামবাগ গ্রামের বাসিন্দা চন্দ্রমোহন মাইতি এই মন্দিরের কারুকার্য তৈরি করেছিলেন ।
এই মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা নিয়ে অনেক অলৌকিক কাহিনী শোনা যায়।যতীন্দ্রমোহন বন্দ্যোপাধ্যায় মন্দির নির্মাণের করতে শুরু করেছিলেন স্বপাদেশ পেয়ে।শোনা যায়, কাটোয়ার গোকুল ভাস্কর পূর্ব মেদিনীপুরের মহিষাদল রামবাগ গ্রামে মায়ের কষ্টি পাথরের মূর্তি নির্মাণ করেছিলেন । এসময়ে তাঁর চোখে পাথরের কুঁচো পড়ে গেলে , গুরুতর আহত হয়।মূর্তি নির্মাণের কাজ বন্ধ হয়ে যায়। তখন তিনি এক বালিকার কণ্ঠস্বর শুনতে পান। মেয়েটি বলেন, ‘তোমার চোখে কিছু হয়নি’। বালিকার মুখে এই আশ্বাসবাণী শোনার পর চোখ খুলেই, দেখেন চোখ ঠিক আছে।গোকুল ভাস্কর যাঁকে দেখেছিলেন, সেই রূপেই তিনি উলুবেড়িয়া কালীবাড়ির দেবীর রূপ দান করেন বলেই কথিত আছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights