google-site-verification=r3lYzE3jI5XC8igrXRKdm9HAWALrzmx6coPmyeHNww4
Spread the love

লেখা ও ছবি- আকাশ বিশ্বাস

শীতের প্রথম পরশ গায়ে মেখে গতকাল বেরিয়ে পড়েছিলাম এক গ্রামীণ মেলার উদ্দেশ্যে। আমায় খানিকটা গ্রামীণ মেলায় ঘোরাঘুরি করতে হয় পুতুল সংগ্রহের উদ্দেশ্যে। সেই সূত্র ধরেই আবার টুকটাক খোঁজ খবরও রাখতে হয়! তেমনভাবেই বেরিয়ে পড়া হল রজিম ফকিরের মেলার খোঁজে।

প্রতিবছর ৭ই অগ্রহায়ণ নদীয়ার রানাঘাট ব্লকের শিমুলিয়ায় এই মেলা আয়োজিত হয়ে থাকে। সদ্য কেটে ফেলা ধানের জমিতে মেলার আয়োজন করা হয়। সাতদিন ব্যাপী এই মেলা শহুরে মেলার থেকে অনেকটাই আলাদা। আগে এই মেলা একদিনের হলেও বর্তমানে সাত দিন চলে। প্রথম তিনদিন মূল মেলা থাকলেও পরে চলে ভাঙা মেলা। ট্রেনে রাণাঘাট ও বনগাঁর মাঝে পড়ে ‘মাঝেরগ্রাম’ স্টেশন। এই স্টেশনের অনতিদূরেই রয়েছে এই মেলা প্রাঙ্গণ। আদতে এটি একটি পীরের মাজারের বার্ষিকী মেলা। শতাব্দী প্রাচীন এই মেলার ইতিহাস জানতে গেলে, ফিরে যেতে হবে প্রায় দুশো বছর। তখন এই জায়গাটি ছিল প্রত্যন্ত গ্রাম। ঘরে ঘরে রোগবালাই লেগে থাকলেও,ছিলনা কোনও চিকিৎসা। ফলে রোগীকে একপ্রকার বিনা চিকিৎসায় মরতে হত।

সেই সময়ে পীরবাবা রজিম ফকির ছিলেন এই গরীব অসহায় মানুষের কাছে এক আশীর্বাদ স্বরূপ। তিনি দৈববলে বিভিন্ন দুরারোগ্য ব্যাধি নির্মূল করার ক্ষমতা লাভ করেছিলেন। ফলে আরোগ্য লাভের আশায় রোগী ও রোগীর পরিবারকে এই রজিম ফকিরের কাছেই নির্ভর করতে হত। অদ্ভুত ভাবে তার জড়িবুটি ও জলপোড়া চিকিৎসায় মরনাপন্ন রোগীও সুস্থ হয়ে উঠতেন। তার চিকিৎসার সুনাম পাশ্ববর্তী গ্রামাঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়েছিল। প্রতিবছর অগ্রহায়ণ মাসের ৭ তারিখ তিনি অদ্ভুত এক প্রবল দৈবশক্তির অধিকারী হয়ে উঠতেন। তাঁর চিকিৎসার সুফল সেদিন ম্যাজিকের মতো কাজ করতো। তাঁর চিকিৎসার ফলাফল পেতে এইদিন সবচেয়ে বেশি জনসমাগম হত। যা কালক্রমে একটি মেলার রূপ নিয়েছে।

রজিম ফকিরের মৃত্যুর পরে তাঁকে একটি নিমগাছের নীচে সমাধিস্থ করা হয়। তার উপর একটি বেদী নির্মাণ করে এক স্মৃতি সৌধ রূপে পুজো করা হয়। স্থানীয় মানুষের বিশ্বাসের বলে আজও ৭ই অগ্রহায়ণ দিনটিতে এখানে ভক্ত সমাগম হয়। তারা ছোটো ছোটো ছলনের ঘোড়া দিয়ে মানসিক পুজো দিয়ে যায় প্রিয়জনের আরোগ্য লাভের আশায়। রজিম ফকিরের পরবর্তী প্রজন্মরা এই স্থানের রক্ষণাবেক্ষণ করেন। তাদের উদ্যোগেই প্রতিবছর আয়োজিত হয়ে আসছে এই মেলা।মানুষের বিশ্বাস আজও তিনি রয়েছেন। তার কৃপাবর্ষণের মহিমায় সবাই আরোগ্য লাভ করবেন।

তারিখ- ৮ই অগ্রহায়ণ (১৪৩১)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights