বাংলার দূর্গা পূজাকে Intangible Cultural Heritage-এর স্বীকৃতি দিচ্ছে UNESCO। কিন্তু তার আগে Intangible Cultural Heritage-এর স্বীকৃতি দিচ্ছে UNESCO বাংলার ছৌ নাচ কে।যদিও২০০৮স্বীকৃতি দিচ্ছে UNESCO। আর ২০০৮ সালে ভারতের ৩টি বিশেষ শিল্পে এই স্বীকৃতি পায় । স্বীকৃতি দেওয়া হয় রামায়ণের ঐতিহ্যবাহী নাট্যরূপ রামলীলা (Ramlila), বৈদিক মন্ত্রোচ্চারণের ঐতিহ্য (Tradition Of Vedic Chanting) এবং দক্ষিণ ভারতের কেরালার সংস্কৃত নাট্যধারা, কুটিআট্টাম (Kutiyattam)-কে।
২০০৯ সালে উত্তরাখণ্ডের রাম্মান (Ramman) উৎসবকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। প্রতিবছর এপ্রিলে গারোয়াল হিমালয়ের দুটি গ্রামে এই Ramman পালিত হয়। গান এবং মুখোশ নাচ এই উৎসবের অংশ।
২০১০ সালে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের আরও কয়েকটি শিল্পের সঙ্গে UNESCO-র এই বিশেষ স্বীকৃতি পায় ছৌ নাচ (Chhau Dance)। পৌরাণিক কাহিনীর উপর নির্ভর করে তৈরি নাচকে ঐতিহ্যের তালিকায় স্থান দেওয়া হয়। তাই বাংলা থেকে UNESCO-র এই বিশেষ সম্মান প্রথম পেয়েছে ছৌ নাচই।
লোকসাহিত্যের আঙিনার এক বিশেষ শৈলী প্রদর্শনকারী মুখোশ নৃত্য হিসেবে প্রসিদ্ধ ছৌ নাচ। দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্ত তথা পুরুলিয়া তথা এক আদিম প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী নৃত্য ধারায় মুখোশ নৃত্য হলো ছৌ নাচ । ভারতীয় দেব-দেবী, দৈত্য-রাক্ষস, নর-বানর চরিত্রগুলির , মুখোশ তৈরি করে , সজ্জিত হয়ে এই নাচ করা হয়। আসলে অপরূপ নৃত্যশৈলী, মুখোশ পরে শেষ করেই এর শেষ নয়। থাকে শারীরিক কসরতের । পুরুলিয়া জেলা তথা মানভূম অঞ্চলে মুখোশ পরে এই নাচ হতো। পরে ওড়িশা, ঝাড়খণ্ড, সেরাইকেল্লা প্রভৃতি স্থানেও ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। পুরুলিয়া অঞ্চলের এই নাচটি বিশ্বের দরবারে এক অনন্য নজির স্থাপন করেছে। তবে এই নাচে দূর্গা প্রভাব বিস্তার।
ছৌ নৃত্য আমাদের বাংলার হৃদয় জুড়ে করছে। আর ছৌ নৃত্য শিল্পের হৃদয় জুড়ে অবস্থান করছেন মা দুর্গা। ছৌ নাচের প্রায় সকল পালায় মা দুর্গা থাকেন সর্বব্যাপী হিসাবে। ছৌ নৃত্যের মানে দুর্গা পালার – গনেশ বন্দনা পালা , শুম্ভ – নিশুম্ভ বধ পালা , মহিষাসুর বধ পালার কথা কথা বলা যায় ।পুরাণ ভিত্তিক পালা কাহিনী গুলো নিজ নিজ স্বকীয়তা বজায় রেখে এক শিল্পীর রূপ নেয়। তবে অন্য পালাতেও দুর্গা কথা নয় এমন পৌরানিক কথার পালা গুলিতেও মা দুর্গার উপস্থিতি দেখতে পাওয়া যায়। যেমন কিরাত অর্জুন পালা।
দুর্গাপূজা আদি উৎস খুঁজতে গিয়ে দেখা যাবে জগতে প্রথম দুর্গাপূজা করেছিলেন শ্রীকৃষ্ণ। ভগবান কৃষ্ণ সৃষ্টির প্রথম কালে মহারাসমণ্ডলে এই আরাধনা করেন। তার পর ব্রহ্মা করেন মধু ও কৈটভ নামক দুই অসুরের হাত থেকে ত্রাণ পাওয়ার উদ্দেশ্যে। তৃতীয় পূজা করেন শিব, ত্রিপুর নামে এক অসুরকে দমন করার জন্য। ত্রিপুর আসলে তিন রকমের – তারকাক্ষ, কমলাক্ষ ও বিদ্যুন্মালী। চতুর্থবার দেবরাজ ইন্দ্র আরাধনা করেন , লক্ষ্মীকে ফিরে পাওয়ার জন্য।
তবে মহাভারত দূর্গা আরাধনা কথা বেশি করে উল্লেখ আছে।মহাভারতে দুর্গাপূজার কথা বিস্তৃতভাবে রয়েছে। শকুনির কাছে দ্বিতীয়বার পরাজিত হলো পাণ্ডবরা কপট পাশা খেলায় ।বারো বছর বনবাস ও এক বছরের অজ্ঞাতবাস হয়। অজ্ঞাতবাসের সময়টি ছিল বেশ কঠিন। কারণ, এই সময় পাণ্ডবরা দুর্যোধনাদি কৌরবদের কাছে ধরা পড়ে গেলে তাঁদের আবারও লুকিয়ে লুকিয়ে কাটাতে হবে। এমন করে তো অনন্তকাল চলতে পারে না। এই চক্র থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য যুধিষ্ঠির দেবী দুর্গার শরণ নিলেন। এবং যুধিষ্ঠির ত্রিভুবনেশ্বরী দুর্গার স্তুতি করেছিলেন।
অজ্ঞাতবাসে যুধিষ্ঠির সেই দেবীকে স্মরণ করলেন এবং তাঁর শরণাপন্ন হলেন। যুধিষ্ঠিরের স্তবে তুষ্ট দেবী দুর্গা তাঁকে নির্বিঘ্নে অজ্ঞাতবাসের বর দান করেন।
মহাভারতের বনপর্বে আছে, সকল প্রকার দুর্গতি থেকে তিনি উদ্ধার করেন বলে তাঁর নাম দুর্গা। বিরাটপর্বে তিনি নন্দগোপকূলজাতা ও যশোদাগর্ভসম্ভূতা। কিন্তু শল্যপর্বে দেবী দুর্গা শৈলপুত্রী, হিমালয়ের কন্যা। মহাভারতের অন্যত্র তিনি মহাদেবের পত্নী। অনুশাসনপর্বের উমামহেশ্বর-সংবাদে সে কথা স্পষ্টভাবে বলা আছে।কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের প্রারম্ভে শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে বললেন, “তুমি দুর্গার স্তুতি করো”। ফলে মহাভারতের পালা করতে গেলে ছৌনাচে দূর্গা উপস্থিত চোখে পড়ে ভীষন ভাবে।
মহাভারতে কাহিনী কেন রামায়ান দূর্গা ছাড়া অসম্ভব। যেমন,”রাবণরাজা বধ ” পালার কাহিনীতেও শেষ লগ্নে মা দুর্গার আগমন ঘটে। রামায়ণে অবশ্যই নানা রূপে মহামায়া অবস্থান করে রয়েছেন। সর্বপোরি তিনি আদ্যা শক্তি মহামায়া মহালক্ষ্মী সীতা রূপে অবস্থান করছেন ।
আবার শিবপুরাণের কাহিনী অবলম্বনে পালার নৃত্যেও শিবের সঙ্গে মা দুর্গাকে দেখা