অরিয়া রয়
গত সপ্তাহান্তে গেছিলাম ঝাড়গ্রাম ঘুরতে , ঝাড়গ্রাম গ্রুপ এর অনেকেই গেছেন, কিন্তু “খোয়াব গা৺”সম্বন্ধে খুব বেশি তথ্য পেলাম না, তাই লিখলাম!!
একটা ছোট্ট সুন্দর ১৫ থেকে ২০টি ঘরের আদিবাসী গ্রাম, যার সম্বন্ধে লোকাল মানুষজন ও কিছুই প্রায় জানে না , সাইট সিন্ করতে বেরিয়ে যাকেই জিজ্ঞেস করি সে বলে জানিনা , আর গুগল ম্যাপ ও একটা পয়েন্ট এ এসে শেষ হয়ে যাচ্ছে, তারপর আর কিছুই দেখাচ্ছে না , অগত্যা প্রায় এক ঘন্টার ওপর ঘুরে ঘুরে এসে পৌঁছলাম ঝাড়গ্রাম জু তে , সেখানে এক টোটো দাদা বলতে পারলো জায়গাটা কোথায়,
জায়গাটা একদম লোকালয় থেকে অনেক ভিতরে বিধানচন্দ কৃষি বিদ্যালয় এর কাজু বাদাম ক্ষেত এর পর ঘন জঙ্গলের মধ্যে, বেশি সাহস করে একাই গেছিলাম কিন্তু দল বেঁধে যাওয়াটাই এখানে ভালো কারণ জায়গাটা ঘন জঙ্গলের ভিতরে লোকালয় থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন এক গ্রাম, অবশ্যই চেষ্টা করবেন দিনে দিনে দেখে আসতে… কারন ওই ঘন জঙ্গলে সন্ধ্যে হলে খুবই চাপ ফেরা!!
এবার আসি সেই স্বপ্নের গ্রাম বা খোয়াব গা৺ সম্বন্ধে !!
১৫থেকে ২০টি ঘরের ছোট্ট এক সাওতাল আদিবাসী গ্রাম , বসতি সেখানে প্রতন্ত কিছু প্রান্তিক লোধা উপজাতির মানুষের যারা আর কিছু জানুক আর নাই জানুক জানে রং আর তুলির খেলা, ছোট্ট ওই গ্রাম টুকুর সব মাটির বাড়ির দেয়াল গুলো রাঙানো দারুন দারুন সব ছবিতে , কোথাও রয়েছে প্রজাপতির সংসার , কোথাও সাদা কালো পটচিত্র , কোথাও মৎসকন্যার গল্প , আবার কোথাও গ্রামের সহজ সরল জীবনযুদ্ধের গল্প ,
চারিদিক দেখতে দেখতে পৌঁছলাম ওদের তৈরী ছোট এক বিপনী তে..ওদের হাতের তৈরী জিনিস পত্র রয়েছে সেখানে , কিনলাম দুটো চাবির রিং দাম পঞ্চাশ টাকা করে, দাম একটু বেশি বলাতে বিপণির লোকটি বললো “জানি ম্যাডাম, কিন্তু এই লাভ টুকু দিয়েই রং তুলি কেনে গ্রামের মানুষ গুলো…সেটা শুনে আর কিছু বলতে পারলাম না, উল্টে রং তুলি প্রিয় আমি দিলাম আরো কিছু ডোনেশন , ভাবলাম নিজের যে শখ টুকু প্রায় গেছে সেটা নিয়ে যারা বেঁচে আছে তাদের উৎসাহ দেওয়ার দায় তো আমারি!!
পুরো গ্রাম ঘুরে, ছবি তুলে ফিরতে প্রায় বেজে গেল সন্ধ্যে সাড়ে পাঁচটা , ফেরার পথে সারাটা মন জুড়ে রয়ে গেল ওই সহজ সরল মানুষ গুলোর অক্লান্ত চেষ্টায় মাটির দেওয়ালে ফুটিয়ে তোলা তাদের জীবনযুদ্ধের গল্প….
শুনেছি জনৈক বাঙালি আর্টিস্ট শিবাজী বন্দোপাধ্যায় এর উৎসাহে ২০১৮ তে শুরু হয় এই কর্মকাণ্ড… তবে লকডাউন পরবর্তী সময়ে চোখে পড়ল মেইনটেন্যান্স এর কিছুটা অভাব!!
ঝাড়গ্রামে প্রায় সব বাড়িতেই কম বেশি নকশা আঁকা দেওয়াল দেখলাম কিন্তু ঘন জঙ্গলের মধ্যে এই স্বপ্নের গ্রাম কিন্তু অনবদ্দ্য, গেলে দেখে আসার চেষ্টা করবেন , আশা করি ভালো লাগবে।
এবার বলি কিভাবে যাবেন… ৯০ শতাংশ টোটো জায়গাটা চেনেনা… আর গূগল ম্যাপে জায়গাটা ঘন জঙ্গলে দেখানো… তাই টোটো কে বলবেন লালবাজার যাবো, নিয়ারেস্ট ল্যান্ডমার্ক বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ঝাড়গ্রাম… ওখানে পৌঁছে কাউকে জিজ্ঞেস করলেই সে দেখিয়ে দেবে. স্টেশন থেকে দূরত্ব প্রায় ৪.৫ কিমি।
বাঃ! দারুণ তো! আপনার লেখাটি পড়ে বুঝতে পারলাম আপনি একা যান নি। সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন একটি দরদী মন। যেটা না থাকলে স্বপ্নের খোঁজ পাওয়া যায় না। আপনি পেয়েছেন কারণ আপনি সেই দরদী মনের অধিকারী। নমস্কার নেবেন।— যযাতি দেবল, পানাগড়। পশ্চিম বর্ধমান।
ধন্যবাদ